পূর্ণিমা দাসের ফেইসবুক থেকে: আমি গত জুন মাসে স্কুলে জয়েন করার পর হুমায়রা ওর মাকে জিগ্যেস করে,"আচ্ছা পূর্ণিমা আন্টিকে কে কি আমি এখন থেকে আন্টি বলবো না মিস বলবো?
ওর মা বলে, তোমার যা ভালো লাগে তাই ডেকো। ওর বাবা মা আমার পূর্বপরিচিত ও খুব কাছের মানুষ।
আমি স্কাই সেকশনের আইসিটি ক্লাস নিতাম।দূর্ঘটনার দিন ওদের অনেক কিছু লিখানোর ছিলো।বাচ্চাগুলো একটুও লিখতে চায় না।আমি বিভিন্ন প্রলোভন দিতাম লিখানোর জন্য, ওইদিন বললাম আমার সাথে সাথে যারা লিখে শেষ করবে তাদের প্রথম পাঁচজনের খাতায় স্টার দিবো।
ওরা সবাই কি এক্সাইটেড। অত ফাস্ট ওরা কখনো লেখেনা।এতো তাড়াতাড়ি সবাই শেষ করে আমাকে মিস মিস করে ডাকাডাকি। আমি প্রথম পাঁচজনের খাতায় স্টার দেওয়ার পর দেখি বাকিদের মন খারাপ তখন সব্বার খাতায় ই স্টার দিয়েছি।ওরা যে কি খুশি!!!!!
বিস্ফোরণের পর যখন আমাকে ওখান থেকে বের করছে, গ্রিলের বাইরে তাকিয়ে দেখি হুমায়রার মা আমাকে দেখে উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করছে,আমার হুমায়রা কই????
আমি পিছন ফিরে আগুনের দিক তাকালাম,এক মুহুর্তের জন্য ছুটে যাচ্ছিলাম আগুনের দিক কিন্তু ভলেন্টিয়াররা আমাকে আটকায় এরপর টান দিয়ে গ্রিলের ভাঙা অংশ দিয়ে আমাকে বের করে।নিচে নেমেই হুমায়রার মা কে জাপটে ধরলাম,সে একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলো।আর ছুটে ছুটে আগুনের দিক চলে যেতে চাচ্ছিলো।কোনোরকমে উনাকে বসিয়ে পুরো স্কুল বাচ্চাটাকে খুঁজেছিলাম।কোত্থাও পাইনি ওকে কোত্থাও না।
আজ পেলাম ওর পোড়া ব্যাগ টা।
ওটাই বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কলেজের পিছনে ওর বাড়িতে এলাম।ওর বাবা মা এখানে নেই, মেয়েকে তাদের গ্রামে দাফন করেছে।ওরা নাকি আর ঢাকাতে আসবেনা।একমাত্র সন্তান হারিয়ে ভাইয়া আপু দিশেহারা।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।আর পারিনা। হুমায়রা,মা তুমি যেখানে থাকো ভালো থাকো।আন্টি তোমাকে খুব ভালোবাসে।