শিরোনাম
◈ হাইকোর্টে টিউলিপ সিদ্দিকের মামলা স্থগিত, আপিলের সিদ্ধান্ত দুদকের ◈ সঠিক পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ’—অর্থনীতিতে আশাবাদী বিশ্বব্যাংক ◈ ডলারের দাম আরও কমেছে, বাড়ছে টাকার মান ও রিজার্ভ ◈ ঝালকাঠিতে এনসিপি’র গাড়িবহর আটকে দিলো বৈষম্যবিরোধীদের একটি পক্ষ (ভিডিও) ◈ নেপা‌লের বিরু‌দ্ধে শ্বাসরুদ্ধকর জয় বাংলা‌দেশ নারী দ‌লের ◈ মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: নেত্রকোনা থেকে দুই আসামি গ্রেফতার ◈ মাহফুজ হত্যাকাণ্ড: ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার ◈ বেনাপোল বন্দরে যাত্রী যাতায়াত করেছে ১২  লাখের কাছাকাছি ◈ জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের পরিবর্তে লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন : অধ্যাপক আলী রীয়াজ  ◈ অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে শান্তি নিশ্চিত করুন: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৩ জুলাই, ২০২৫, ০১:২০ দুপুর
আপডেট : ১৪ জুলাই, ২০২৫, ০১:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা বাড়ছে: শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও ভ্রমণকারীদের ভোগান্তি চরমে!

বিভিন্ন দেশে শিক্ষাগ্রহণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভিসা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। ভারতের ভ্রমণ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, অন্য ক্যাটাগরির ভিসার অনুমোদন হারও কম। সূত্র: জাগোনিউজ২৪

ভারতের চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমে ফুল স্কলারশিপ পাওয়া এক শিক্ষার্থী রিগ্যান মোর্শেদ (ছদ্মনাম) গত ১১ জুন ভিসার জন্য আবেদন করলেও এখনও পাননি অনুমোদন। ফলে ২৮ জুন শুরু হওয়া ক্লাসে যোগ দিতে পারছেন না তিনি। এমন পরিস্থিতিতে স্কলারশিপ হারানোর শঙ্কায় দিন পার করছেন রিগ্যান।

শুধু ভারত নয়, থাইল্যান্ড, চীন, তাজিকিস্তান, মালয়েশিয়া, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার ভিসাও এখন অনেক বাংলাদেশির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ভ্রমণকারী ও ইউটিউবার নাদির নিবরাস জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি তিনটি দেশের ই-ভিসা তার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

ভ্রমণ ও ভিসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, আগে তুলনামূলক সহজ ভিসা পাওয়া যেত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। এখন সেই দেশগুলোর দূতাবাসও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। ‘দ্য মনিটর’ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদউদ্দিন আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বেড়ে চলা অবৈধ অভিবাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এর অন্যতম কারণ।’

এদিকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, শুধু অতি জরুরি ও মেডিকেল ভিসা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে মেডিকেল ভিসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ধীরে ধীরে অন্য ক্যাটাগরিগুলোও চালু করা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও ভিসা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরছেন বহু শিক্ষার্থী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম জানান, ‘ভিসা প্রত্যাখ্যানের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই, তবে এখন সব দেশই যাচাই-বাছাই বাড়িয়েছে।’

ভিএফএস গ্লোবাল ও সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভুয়া সনদপত্র জমার প্রবণতাও ভিসা প্রত্যাখ্যান বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে অনেক দেশের ভিসা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে ততটা না।’ মলদোভা ও বাহরাইনের ই-ভিসার ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।

নাদির বলেন, ‘অনেকে জানতে চান আমি যুদ্ধবিধ্বস্ত বা বিতর্কিত দেশগুলোতে যাই না কেন। আসলে এমন দেশের ভিসা পাসপোর্টে থাকলে উন্নত দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সে ঝুঁকি এখন নেওয়া সম্ভব না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভ্রমণ গ্রুপগুলোতেও এখন এমন হতাশা নিয়মিত চোখে পড়ে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, ভিসা ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।

মেডিকেল ভিসায় গুরুত্ব ভারতের
এদিকে গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য কার্যত ভারতের ভিসা বন্ধ। মেডিকেল ইস্যুসহ অতি জরুরি বিষয়ে ভিসা চালু রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন। তবে এখনো চিকিৎসার প্রয়োজনে অনেকেই ভিসা পাচ্ছেন না বলে জানায় তারা। আর শিক্ষার্থীদের ভিসার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে জরুরি মেডিকেল ভিসাগুলো দেওয়ার চেষ্টা করছি। ধীরে ধীরে বাকি ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট পরবর্তীসময়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতীয় হাইকমিশন ও ভিসা সেন্টারে অনেক কর্মকর্তাই এখনো বাংলাদেশে ফেরেননি। ফলে জনবল সংকট রয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্কও ভিসা জটিলতার জন্য দায়ী।

তবে ভিসাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী রিগ্যান জানান, তার মতো আরও দুজন শিক্ষার্থী ভারতের চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমে স্নাতকোত্তর কোর্সে ফুল স্কলারশিপ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের ভিসা অনুমোদন হলেও পাসপোর্ট হাতে পাননি এখনো। তিনিসহ আরও একজন দ্রুততম সময়ে ভিসা পেয়ে যাবেন বলে আশা করছেন।

পশ্চিমা দেশের ভিসা পাওয়া আরও কঠিন

পশ্চিমা দেশগুলোর ভিসা পাওয়া যেন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের খরচে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘ প্রস্তুতির পরেও গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ভিসা আবেদনকারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার দুই বছরের প্রস্তুতি দুই মিনিটেই শেষ। আমার চোখের সামনে ১০-১২ জন ভিসার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তাদের সবাইকে ভিসা প্রত্যাখ্যাত হতে দেখেছি। এদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।’

তিনি বলেন, ‘সেদিন সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও স্ত্রীসহ ভিসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান।’

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় নথি যাচাই-বাছাইয়ের পর ভিসা দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ওপর নির্ভর করে। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূতও সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’

ভ্রমণ ও ভিসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতার কথাও একই রকম। মুবিন এয়ার সার্ভিসের বিপণন কর্মকর্তা রাসেল খান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সহজেই ভিসা দিতো। এখন সেই দেশগুলোও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে।’

দেশের অ্যাভিয়েশন ও ট্যুরিজম বিষয়ক ম্যাগাজিন—‘দ্য মনিটর'র সম্পাদক কাজী ওয়াহিদউদ্দিন আলম বলেন, ‘আগে যেসব দেশের ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ ছিল, এখন সেগুলোও কঠিন হয়ে গেছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর—সবখানেই রিজেকশন বেড়েছে। এর পেছনে বাংলাদেশ থেকে বেড়ে চলা অবৈধ অভিবাসনের হার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বড় ভূমিকা রাখছে।’

এসব সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করার প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।

ভিএফএস গ্লোবালের একজন কর্মী বলেন, ‘আমরা ভিসা প্রসেসিংয়ের সহায়তা করি, অনুমোদন দিই না। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, বর্তমানে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে।’

‘এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের সময়ও একই রকম পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল,’ বলেন ওই ভিএফএস কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভিসা প্রত্যাখ্যান বেড়েছে—এমন কোনো ডাটা আমাদের কাছে নেই। তবে অনেকেই সঠিক ও প্রকৃত কাগজপত্র জমা দেন না। আবার এখন সব দেশই ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই অনেক বাড়িয়েছে। তবে সেটা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নয়, সব দেশের জন্যই।’

অনেক ভিসাপ্রত্যাশী বাংলাদেশি প্রকৃত কাগজপত্র জমা দেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

একই প্রসঙ্গে গত ২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বিদেশগামীদের মধ্যে জাল সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেওয়ার প্রবণতা ভিসা জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়