আইরিন হক, বেনাপোল প্রতিনিধি: বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত করেছে ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন।
বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে বিদায়ী (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছে ১১'লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছে ৬ লাখ ৬ হাজার ৪১০ জন। ভারত থেকে ফিরছে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। এসময় ভ্রমণখাতে সরকারের রাজস্ব এসেছে ১১০ কোটির কাছাকাছি।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে এ পথে যাত্রী যাতায়াত করেছে ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৮ জন। এসময় সরকারের রাজস্ব এসেছে ২০০ কোটির কাছাকাছি।
পরিসংখ্যন বলছে, ভিসা জটিলতাসহ নানান কারণে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের চেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাসপোর্টধারী যাতায়াত কমেছে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭ জন। এসময় ভ্রমণখাতে রাজস্ব আয় কমেছে ১০০ কোটির মত।
জানা যায়, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর ও পর্যটন কেন্দ্র কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার বেশির ভাগ পাসপোর্টধারীরা চিকিৎসা, ব্যবসা, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ আর দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে বেনাপোল সীমান্ত ব্যবহার করে থাকে। পদ্মা সেতু ব্যবহারে এ যাত্রা আরও সহজ হয়েছে। তবে ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ভিসা দেওয়া একপ্রকার বন্ধ করে রেখেছে ভারত সরকার। এখনও স্বাভাবিক হয়নি ভিসা প্রক্রিয়া। এতেই কমে আসে যাত্রী যাতায়াত।
এছাড়া দুই পাড়ের ইমিগ্রেশন, কাস্টম ও বন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী যাত্রীদের। রয়েছে দালাল চক্রের কবলে পড়ে পাসপোর্টধারীদের ছিনতাই ও প্রতারণার ঘটনা। এসব বিষয় বিভিন্ন সময় পাসপোর্টধারীরা অভিযোগ করেও কোনো ধরনের প্রতিকার মেলেনি।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, ব্যবসার কাজে যেতে হয় ভারতে। ভারতীয়দেরও আসতে হয় এদেশে। তবে ভারতীয়রা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে স্বাভাবিক ভিসা পেলেও আমাদের ভিসা দিচ্ছে না ভারতীয় দূতাবাস। এতে বিভিন্নভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশিরা।
পাসপোর্টধারী অভিজিত বিশ্বাস জানান, ভ্রমণ কর বাড়লেও সেবা বাড়েনি। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
পাসপোর্টধারী পলাশ জানান, পদ্মা সেতুর সুবিধায় ঢাকা থেকে ৫ ঘণ্টায় বেনাপোল আসা যায়। তবে বন্দর ভোর সাড়ে ৬ টার পর খোলায় আগের দুর্ভোগ রয়ে গেছে।
বেনাপোল বন্দর আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, যাত্রীদের বন্দরে কাঙ্ক্ষিত সেবা বাড়েনি। বন্দরে যাত্রী ছাউনি না থাকায় রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে যাত্রা করতে হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় প্রতিনিয়ত পাসপোর্টধারীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে বন্দরে।
বেনাপোল বন্দর সহকারী পরিচালক কাজী রতন জানান, বিদায়ী (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছে ১১'লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন। যাত্রী সেবা বাড়াতে বন্দরে যাত্রী ছাউনির জন্য জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ভারত অংশে ইমিগ্রেশনকেও সেবা বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাত্রী নিরাপত্তার প্রতি সজাগ থাকতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি ইলিয়াছ হোসেন মুন্সী জানান, স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাতায়াত করতো। তবে ভিসা জটিলতায় বর্তমানে যাত্রীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে। সবশেষ ১৩জুলাই ভারতে গেছে ৯৬৯ জন। ভারত থেকে ফিরেছে ৭১৯ জন। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ছিল ৩২৫ জন। অন্য দেশের এক জন।