মো. রফিকুল ইসলাম মিঠু, ঢাকা: ঢাকার আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হাতেম আলী কলেজের ছাত্র মো. মাহফুজুর রহমানকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িত একটি ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। এই চক্রের চার সদস্যকে পৃথক অভিযানে টঙ্গীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার রাতে। মাহফুজুর রহমান ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম হন এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান। তার মরদেহ আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বিআরটির একটি নির্মাণাধীন স্থানে পাওয়া যায়।
ঘটনার পরপরই র্যাব-১ ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে ভিকটিমের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটি হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই ঘণ্টা পর শনাক্ত হয়। মোবাইলের বর্তমান ব্যবহারকারীকে অনুসরণ করে জানা যায়, সেটটি টঙ্গীর মাজার বস্তির এক চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩,৫০০ টাকায় কেনা হয়েছিল।
পরবর্তীতে গ্রাহকের সহযোগিতায় চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ী রাকিব ইসলাম (২৬)কে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে রাকিব জানান, তিনি আগে মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন এবং বর্তমানে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে মোবাইল কিনে সেগুলো বিক্রি করেন। তিনি ছিনতাইকারীদের কাছে ধারালো অস্ত্রও সরবরাহ করেন।
রাকিবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব অভিযান চালিয়ে ছিনতাই চক্রের তিন সদস্য—মো. রাফসান ওরফে রাহাত (২৮), মো. রাশেদুল ইসলাম (২০), ও মো. কাওছার আহম্মেদ পলাশ (২৩)—কে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে পলাশকে আটক করা হয়, পরে তার তথ্য অনুযায়ী ছুরি ব্যবহাকারী রাশেদ ও মোটরসাইকেল চালক রাহাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ঘটনার দিন হাউজ বিল্ডিং ও কুর্মিটোলা এলাকায় আরও দুটি মোবাইল ছিনতাই করেছিল তারা। পলাশ মূলত ভিকটিমের মোবাইল ও মানিব্যাগ সংগ্রহ করতেন এবং রাশেদ ভিকটিমকে ভয় দেখিয়ে আঘাত করতেন। তারা ছিনতাইয়ের আগে সাধারণত মাদকসেবন করত এবং রাকিবের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করত।
গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, মাহফুজের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় রাশেদ ছুরি ব্যবহার করে তাকে আঘাত করেন। এরপর দ্রুত মোবাইলগুলো রাকিবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাকিব জানান, মোবাইল দেওয়ার সময় পলাশের হাতে রক্ত দেখতে পান এবং ছিনতাইকারীরা এক ড্রাম পানি দিয়ে নিজেদের পরিষ্কার করে।
রাকিব আরও জানান, মোবাইল হস্তান্তরের পর তিনি ছিনতাইকারীদের সতর্ক করেন যে পুলিশ তাদের সন্দেহ করছে। এ তথ্য জানার পর রাশেদ মোবাইলটি দিয়ে দেন এবং অর্থ না নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
এ ঘটনায় নিহত মাহফুজের বোন জামাই মো. জসিম বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় ১১ জুলাই একটি মামলা (মামলা নম্বর-৭) দায়ের করেন। এতে পেনাল কোডের ৩৯৪/৩০২/৩৪ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।