অপারেশন সিঁদুরের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশে সামাজিক মাধ্যমে দাবানলের মধ্যে ছড়াচ্ছে এই সংঘাত নিয়ে পোস্ট।কিছু ভাইরাল ভিডিওর ফ্যাক্ট চেক করেছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভ্যালে।তারা বলছে, ভাইরাল হওয়া পোস্টের অনেকগুলো ভুয়া।
একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, এটা বর্তমান সংঘাতের ছবি। আসলে এটা পুরনো ছবি। পাকিস্তানে প্রশিক্ষণের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।ছ
ভারতের রাফাল ধ্বংস নিয়ে পাকিস্তানের উচ্ছ্বাস
দাবি: ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাফাল বিমানকে গুলি করে নামিয়েছে পাকিস্তান। বাহাওয়ালপুরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: মিথ্যা। বিমানটি ফ্রান্সে তৈরি একটি যুদ্ধবিমানের। কিন্তু এটা রাফাল নয়, মিরাজ ৫। এটা পাকিস্তানের বিমান বাহিনী ব্যবহার করে। এই যুদ্ধবিমান পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে।
ইন্ডিয়া টিভি, ডন, ইকনমিক টাইমস জানিয়েছে, এই পোস্টে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেই বিমানটি দক্ষিণপূর্ব পাকিস্তানের পাঞ্জাবে তিন সপ্তাহ আগে প্রশিক্ষণ উড়ানের সময় ভেঙে পড়ে। দুইজন পাইলট অবশ্য বিমান ধ্বংসের আগেই তা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন। তারা সামান্য আহত হন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পাঞ্জাবও ভাগ হয়। তার একটা ভাগ পড়ে ভারতে, অন্য ভাগটি পাকিস্তানে। এই বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনা তিন সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে হয়েছিল।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির ভিডিও
দাবি: এই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র বন্যার মতো পাকিস্তানের উপর পড়ছে। এই ভিডিওতে হ্যাশট্যাগ দেয়া হয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’। এটাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে অভিযান করেছে, তার নাম। পোস্ট করার পর ৫০ লাখ বারেরও বেশি দেখা হয়েছে ভিডিওটি।
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: মিথ্যা
এই ভিডিওতে বর্তমান সংঘাতের ছবি দেয়া হয়নি। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যাচ্ছে, সাত মাস আগের একটি ভিডিও থেকে ক্ষেপণাস্ত্রর ছবি নেয়া হয়েছে। ইসরায়েলের উপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও ছিল সেটি। ফুটেজের ডানদিকে ডিডি ইন্ডিয়ার লোগোও দেখতে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর।
দ্বিতীয় ভিডিওতে ভূমিতে এই হামলার যে প্রতিক্রিয়া তা দেখানো হয়েছে। সেটিও তিন সপ্তাহ আগে গাজা হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এই ভিডিওতে দেখা গেছে, বাচ্চা ও বয়স্করা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে। ধুলোর মধ্যে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা আরবি ভাষায় কথা বলছেন, এই ভাষা পাকিস্তানে সাধারণ ব্যবহৃত ভাষা নয়।
গেমাররা কি ভিডিও গেমসের ফুটেজ ছড়াচ্ছে?
দাবি: এই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান ভারতের যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামিয়েছে।
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: মিথ্যা। নেটিজেনরা দ্রুত জানিয়েছেন, এটা আসলে একটি ভিডিও গেমের দৃশ্য। অন্য ভিডিওর তুলনায় এখানে উজ্জ্বল আলো আছে এবং একটা কৃত্রিম ভাব রয়েছে। এই ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেম দেখার পর মনে হয়েছে, এই ভিডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি।
এমন নয় যে এই প্রথম বার ভিডিও গেমসের ফুটেজ ব্যবহার করা হলো। এর আগেও ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক দেখিয়েছে ভিডিও গেমসের ফুটেজ ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।
‘প্রাউড ইন্ডিয়ান’ ভুল পাইলটের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে
দাবি: সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ করা এই পোস্টটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন। সেখানে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানিরা একটি রাফাল ও একটি এসইউ-৩০ আখনুরের কাছে গুলি করে নামিয়েছে! এবং একটি ব্রিগেড সদরদপ্তর ধ্বংস করেছে! এটা এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ভারত সরকারকে 'মোদী শাসন' বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং নিজেকে প্রাউড ইন্ডিয়ান বলে দাবি করে অ্যাকাউন্টের মালিক বলেছেন, তিনি সত্যকে প্রচারের থেকে উপরে স্থান দেন।
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: মিথ্যা। এখানে অ্যাকাউন্ট থেকে অপতথ্য প্রচার করা হচ্ছে। যে দুইটি ছবি দেওয়া হয়েছে, তা অপারেশন সিন্দুর বা সিঁদুরের সঙ্গে যুক্ত নয়।
ডানদিকের ছবিতে যে বিমানটিকে দেখানো হয়েছে, তা রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের, যা পাকিস্তান গুলি করে নামিয়েছে বলে দাবি করেছে। এই ছবিটিই ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডিএনএসহ ভারতের বেশ কিছু মিডিয়া ছেপেছিল। এই বিমানটি রাজস্থানের জনমানবহীন একটা অঞ্চলে ভেঙে পড়ে। পাইলট আগেই বিমান থেকে বের হয়ে আসেন।
অন্য যে বিমানের ছবি দেওয়া হয়েছে, সেটা ভারতের যুদ্ধবিমান ঠিকই, কিন্তু তা অপারেশন সিন্দুরে ব্যবহার করা হয়নি। এই ছবিটি দেখিয়েই ভারতের নিউজ চ্যানেল টাইমস নাও জানিয়েছিল, ব্রিটিশ ও ফরাসি যুদ্ধবিমান জাগুয়ার গুজরাটে ভেঙে পড়েছে।