শিরোনাম
◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া? বিএনপি–জামায়াতের মধ্যে আলোচনা উদ্যোগ ◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির!

প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:৩৯ সকাল
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুপারি গাছকে আশ্রয় করে বিনা খরচে চাষ: বিনা খরচের ‘চুইঝাল’ বদলে দিচ্ছে রংপুর অঞ্চলের ১৫ হাজার কৃষকের জীবনযাত্রা

দেখতে পানের মতো, কিন্তু রান্নায় ব্যবহার হয় মসলা হিসেবে। সুপারি গাছকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠা সেই চুইঝালই এখন রংপুর অঞ্চলের বহু কৃষকের জীবিকা বদলে দিচ্ছে। বিনা খরচের এই চাষে বাড়তি আয় হওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল আবাদে ঝুঁকছেন।

রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা—এই পাঁচ জেলার প্রায় ১৫ হাজার কৃষক এখন চুইঝাল চাষ করছেন। এটা চাষ করতে কোনো সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তাই খরচ বলতে গেলে নগন্য। তবে চুইঝালের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুরির ঘটনাও বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন কৃষকেরা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার রামদাস গ্রামের কৃষক আছির উদ্দিন সরকার (৭০) বলেন, 'চুইঝাল এখন এতটাই দামি যে অনেক সময় রাতে গাছ পাহারা দিতে হয়। এটা থেকে বাড়তি আয় হয়। এই টাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে।'

আছির উদ্দিন জানান, একটি চুইঝাল লতা বিক্রির উপযোগী হতে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লাগে। তবে লতা যত পুরোনো হয়, দাম তত বাড়ে। তার কথায়, '২০ বছরের বেশি পুরোনো লতার দাম অনেক বেশি। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যান।' নিজের বাড়ির ৩০টি সুপারি গাছে চুইঝাল চাষ করে তিনি বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর গ্রামের সুনির্মল চন্দ্র বর্মণ (৬৫) বলেন, 'চুইঝাল চাষে আলাদা কোনো খরচ নেই। পুরোনো লতার কাণ্ড থেকেই নতুন চারা গজায়। শুধু মাঝে মাঝে একটু পরিচর্যা করতে হয়। প্রায় সব গাছেই এই লতা তুলে দেওয়া যায়, তবে সুপারি গাছই সবচেয়ে ভালো হয়।'

স্থানীয়ভাবে 'চুইঝাল' নামে পরিচিত এই লতার বৈজ্ঞানিক নাম পাইপার চাবা। এর নির্যাস আমাশয়, শরীরব্যথা ও হজমের সমস্যায় বেশ উপকারী বলে মনে করা হয়। চার বছর আগেও প্রতি কেজি চুইঝালের দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, যা এখন বেড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। চাহিদা বেশি থাকায় পাইকাররা সরাসরি কৃষকের বাড়ি থেকে মণ হিসেবে কিনে নিয়ে যান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকর্তারা জানান, রংপুর অঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বাণিজ্যিক সুপারি বাগান বেশি থাকায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে এর চাষ সবচেয়ে বেশি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কৃষক সুভাষ চন্দ্র রায় (৭০) বলেন, 'চুইঝালের চাহিদা প্রতি বছরই বাড়ছে। এখন আমাদের ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এর চাষ হচ্ছে। আমি বছরে প্রায় ৯০ হাজার টাকা আয় করি।'

প্রায় ১৫ বছর ধরে চুইঝালের ব্যবসা করছেন লালমনিরহাটের বড়বাড়ি হাটের ব্যবসায়ী মোবারক আলী। তিনি বলেন, 'আমি মূলত চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় চুইঝাল পাঠাই। লবণাক্ততার কারণে ওই সব এলাকায় এর ফলন ভালো হয় না, কিন্তু চাহিদা ব্যাপক। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ৬০০–৭০০ টাকায় কিনে ৮০০–৯০০ টাকায় বিক্রি করি।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'এই অঞ্চলের জলবায়ু ও মাটি চুইঝাল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। রোগবালাই কম হওয়ায় এটি কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় ফসল।'

রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'পানি জমে না এমন মাটিতে চুইঝাল ভালো হয়। আমরা এখনো বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদে উৎসাহ দিচ্ছি না। তবে কোনো কৃষক চাইলে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকি।'

সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়