কুরবানি একটি ওয়াজিব ইবাদত। এটির গুরুত্ব খুবই বেশি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কুরবানি করা আবশ্যক। এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনুল করিমে ইরশাদ হয়েছে, (হে রাসূল) আপনি বলে দিন: আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সব কিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য। (সূরা আনআম, আয়াত : ১৬২)
উম্মুল মুমিনীন আম্মাজান হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরবানির দিনের আমলসমূহের মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় আমল হল রক্ত কুরবানি করা। কিয়ামতের দিন তা নিজের শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত হবে। আর কুরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব তোমরা আনন্দিত মনে কুরবানি কর। (জামে তিরমিজি, হাদিস নং: ১৪৯৩)
সামর্থ্যবান ব্যক্তি তথা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি ইচ্ছাকৃত কুরবানি না দেন, তবে তার ব্যপারে কঠোর ধমকি এসেছে হাদিস শরীফে। বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যার কুরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৩৫১৯)
১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে কুরবানি করা ওয়াজিব। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। নাবালক বা পাগলের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
কুরবানির নেসাব: কুরবানীর নেসাব হল- সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা। আর টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। এগুলোর মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে নেসাবের মালিক হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে।
সোনা-রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫)
পরিবারের একাধিক ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব হলে: এক পরিবারের মধ্যে যদি একাধিক ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়। অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তি যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তাদের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানি ওয়াজিব হবে। প্রত্যেকেই একটি করে পশু কুরবানি করবে অথবা বড় পশুতে শরিক হবে। তবে পরিবারের কর্তা বা অন্য কেউ যদি সম্মতি নিয়ে তার পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়ে দেয় তাহলে তার কুরবানি আদায় হয়ে যাবে।
নারীদের কুরবানি: নারীদের জন্য কুরবানির বিধান পুরুষের মতোই। কোনো নারী সামর্থ্যবান হলে তথা কুরবানির নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব। তার জন্যও আলাদা কুরবানী দিতে হবে।
এক্ষেত্রেও সামর্থ্যবান নারীর স্বামী, পিতা বা অন্য কেউ যদি সম্মতি নিয়ে তার পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়ে দেয় তাহলে তার কুরবানি আদায় হয়ে যাবে।
কুরবানি না দিতে পারলে: কুরবানির দিনগুলোতে কেউ যদি ওয়াজিব কুরবানি দিতে না পারেন তাহলে কুরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা তার জন্য ওয়াজিব।
আর যদি এমন হয়- পশু ক্রয় করেছিলেন, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানি দেয়া হয়নি, তাহলে ঐ পশুই জীবিত সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫) উৎস: চ্যানেল২৪