নিজস্ব ডেস্ক: ইয়েমেনে এক স্থানীয় নাগরিককে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার ফাঁসি কার্যকর সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। নিমিশার পরিবার এবং ভারত সরকারের মধ্যস্থতায় ভুক্তভোগীর পরিবার ‘ব্লাড মানি’ বা রক্তপণ নিয়ে আলোচনার জন্য আরও সময় দিতে সম্মত হওয়ায় এই স্থগিতাদেশ এসেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এই খবর নিশ্চিত করেছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট:
কেরালার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ২০১৭ সালে ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আবদো মাহদিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হন। নিমিশার ভাষ্যমতে, তালাল তার স্বামী সেজে তাকে ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন, তার পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছিলেন এবং তার উপার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছিলেন।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে, নিমিশা তার পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার জন্য আরেক নার্সের সহায়তায় তালালকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেন। কিন্তু ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে তালালের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নিমিশাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ইয়েমেনের আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরবর্তীতে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতও এই রায় বহাল রাখে।
ফাঁসি স্থগিতের কারণ:
শরিয়া আইন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির শাস্তি কার্যকর করার আগে ভুক্তভোগীর পরিবারকে রক্তপণ বা ‘দিয়া’ (Diya) গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। যদি ভুক্তভোগীর পরিবার এই অর্থ গ্রহণ করে আসামিকে ক্ষমা করে দেয়, তবে মৃত্যুদণ্ড মওকুফ হতে পারে।
নিমিশার পরিবার ও ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে তালালের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, ভারত সরকারের কর্মকর্তারা ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত সানা শহরের কারা কর্তৃপক্ষ এবং প্রসিকিউটরের অফিসের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাদের মধ্যস্থতাতেই তালালের পরিবার আপাতত ফাঁসি স্থগিত রেখে আলোচনার জন্য আরও কিছুটা সময় দিতে রাজি হয়েছে।
তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই স্থগিতাদেশের অর্থ নিমিশার মুক্তি বা ভারতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হওয়া নয়। তার ভাগ্য এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে তালালের পরিবারের ক্ষমার ওপর।
কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
এই ಪ್ರಕರಣটি ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ইয়েমেনের রাজধানী সানা বর্তমানে হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে, যাদের সঙ্গে ভারতের কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। গৃহযুদ্ধের কারণে ভারত সরকার ২০১৪ সালেই সানায় তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে জিবুতিতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে ইয়েমেন-সম্পর্কিত বিষয়গুলো তদারকি করা হয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ভারত সরকার অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে নিমিশাকে সহায়তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক উদ্যোগ:
নিমিশাকে বাঁচাতে ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ব্লাড মানি হিসেবে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য কাজ করছে।
এই স্থগিতাদেশ নিমিশার পরিবার এবং ভারত সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য মূল্যবান সময় এনে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সমঝোতা আলোচনা শেষ পর্যন্ত সফল হয় কিনা।