এনডিটিভি: ভারতের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের দুর্ঘটনার এক মাস পর প্রকাশিত এক প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিমানের জ্বালানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাই হতে পারে ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ। এই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৭০ জন নিহত হন।
ভারতের এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) শনিবার ১৫ পৃষ্ঠার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে জানানো হয়েছে, ১২ জুন লন্ডনগামী ফ্লাইটটি উড্ডয়নের ঠিক পরপরই বিমানের দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’ এ চলে যায়। অর্থাৎ ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং অনুযায়ী, এক পাইলট অপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কেন ফুয়েল কেটে দিলে?’ অপর পাইলট তখন উত্তর দেন, ‘আমি কিছু করিনি।’
এই ‘CUTOFF’ সুইচ বদলানোই এখন তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল অংশে পরিণত হয়েছে। বিমানটির Enhanced Airborne Flight Recorder (EAFR) অনুযায়ী, কিছু সেকেন্ডের মধ্যে পাইলটরা ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচ আবার ‘RUN’ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। বোয়িং ৭৮৭-এর মতো বিমান এক ইঞ্জিনে উড্ডয়ন সম্পন্ন করতে সক্ষম, এবং এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাইলটরাও প্রশিক্ষিত।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ যদি মাঝআকাশে ‘CUTOFF’ থেকে ‘RUN’ এ ফেরত আনা হয়, তাহলে প্রতিটি ইঞ্জিনের FADEC (Full Authority Digital Engine Control) সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় ইগনিশন এবং থ্রাস্ট নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। তবে, রেকর্ডিং বন্ধ হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ড পরই।
এরপরই এক পাইলট মায়ডে (জরুরি সংকেত) পাঠান। কন্ট্রোল টাওয়ার তখন কল সাইন জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি বিমানবন্দরের সীমানার বাইরে একটি মেডিকেল ছাত্রাবাসের ওপর ভেঙে পড়ে এবং তীব্র বিস্ফোরণে প্রায় সবাই নিহত হন। বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই এবং ভবনের আরও প্রায় ৩০ জন নিহত হন। বিমানটি আকাশে ছিল মাত্র ৩২ সেকেন্ড।
বিমানটি চালাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল, যিনি ৮,২০০ ঘণ্টার ফ্লাইট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন লাইন ট্রেনিং ক্যাপ্টেন। তাকে সহায়তা করছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর, যিনি ১,১০০ ঘণ্টা ফ্লাইং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। তদন্তে বলা হয়েছে, উভয় পাইলটই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ এবং বিশ্রামপ্রাপ্ত ছিলেন।
তদন্তকারীরা এখনো নাশকতার কোনো প্রমাণ পাননি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (FAA) পূর্ববর্তী এক বিজ্ঞপ্তিতে বোয়িং ৭৩৭ সিরিজের বিমানে ফুয়েল সুইচের লকিং ফিচার নিস্ক্রিয় থাকার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছিল। যদিও তখন বিষয়টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ নয়’ বলে বিবেচিত হয়।
এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিমানের Ram Air Turbine (RAT) সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায়, যা তখনকার এয়ারপোর্টের সিসিটিভিতেও ধরা পড়ে। RAT সাধারণত তখনই সক্রিয় হয়, যখন দুই ইঞ্জিন ব্যর্থ হয় বা পুরো ইলেকট্রনিক ও হাইড্রলিক সিস্টেম অকার্যকর হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্লাইটপথের আশেপাশে উল্লেখযোগ্য পাখির চলাচল দেখা যায়নি। বিমানটি এয়ারপোর্টের প্রাচীর অতিক্রম করার আগেই উচ্চতা হারিয়ে নিচে নেমে আসে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাইলটদের অভ্যন্তরীণ সংলাপ এবং ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচের আচমকা পরিবর্তন এই দুর্ঘটনার পেছনে বড় কোনো কারিগরি ত্রুটির ইঙ্গিত দিতে পারে। সূত্র: জনকন্ঠ