আলজাজিরা: নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে এটি চতুর্থবারের মতো লেবাননের রাজধানীতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ঈদুল আযহার প্রাক্কালে বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়েছে, প্রায় এক ঘন্টা পরে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ড্রোন তৈরির জন্য লেবাননের গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলির বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনের নেতৃত্বাধীন সরকার, আরব দেশ এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলির মতে, ইসরায়েল সাত মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আসছে। আউন সম্প্রতি ইসরায়েলের উপর লাগাম টানার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
আউন বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হামলার পর বলেন, "ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা" এবং "একটি পবিত্র ধর্মীয় উৎসবের প্রাক্কালে ... আন্তর্জাতিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন"।
হামলার আগে, ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র আভিচায় আদরাই দাহিয়েহ শহরতলির হাদাথ, হারেত হরেক এবং বুর্জ আল-বারাজনেহ এলাকার ভবনের কাছাকাছি বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর বৃহস্পতিবারের এই হামলাটি চতুর্থবারের মতো বৈরুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তারা হিজবুল্লাহর স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এবং হামলার ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে।
"আপনি হিজবুল্লাহর অবকাঠামোর পাশে আছেন," আদ্রাই একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, যেখানে চারটি ভিন্ন স্থানে লক্ষ্যবস্তু করা আটটি ভবনের মানচিত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। আরবি ভাষায় বার্তাটিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে ইসরায়েল শীঘ্রই এলাকায় বোমা হামলা চালাবে।
সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের পর, লেবাননের গণমাধ্যম জানিয়েছে যে এলাকাটি প্রায় বাসিন্দাদের থেকে খালি হয়ে গেছে, যারা ঈদুল আযহা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "সতর্কীকরণের আঘাত" শোনা যেতে পারে বলে এটি সিল করে দেওয়া হয়েছিল।
ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে যে দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় ১০০টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়ে গেছে।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলি হামলা দক্ষিণ লেবাননের আইন কানা গ্রামকেও লক্ষ্য করে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার সতর্কতা জারি করার কিছুক্ষণ পরেই। আইন কানা উপকূলীয় শহর সিডনের পূর্বে অবস্থিত।
‘অনেক আতঙ্ক’
আল জাজিরার জেইনা খোদর, হামলার পরপরই বৈরুত থেকে রিপোর্ট করে বলেন, “মানুষ যখন বেরিয়ে আসছিল তখন এখানে প্রচুর যানজট ছিল। আপনি কল্পনা করতে পারেন, এতে প্রচুর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে সেনাবাহিনীর বিমান হামলা এটিই প্রথম নয়, তবে এটিই সবচেয়ে বড় আক্রমণ।”
খোদর বলেন, চারটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আটটি ভবন লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বিমান হামলার তীব্রতার কারণে এলাকার সমস্ত বাসিন্দাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
বিশ্লেষক রামি খুরি আল জাজিরাকে বলেন যে এই হামলা "অবাক হওয়ার কিছু নেই", কারণ ইসরায়েল "গত তিন-চার মাস ধরে" মানুষ হত্যা করে আসছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও তারা দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি স্থান দখল করে রেখেছে।"
"ইসরায়েলিরা সর্বদা তাদের শত্রুদের তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য সামরিক শক্তিকে তাদের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে," তিনি বলেন। "কিন্তু বিদ্রূপ হল এটি কাজ করেনি। এটি কেবল ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করেছে, এবং আমাদের লেবাননে এর অর্থ কী তা দেখতে হবে ... গত বছর হিজবুল্লাহ আঘাত পেয়েছিল এবং তারা স্পষ্টতই পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে," তিনি বলেন। "আমরা ঠিক জানি না তারা কী করছে, তবে তারা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে," তিনি আরও বলেন।
আল জাজিরার সানাদ এজেন্সি দ্বারা যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে যে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সতর্কতার পরে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে:
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহকে ওই অঞ্চলে ড্রোন তৈরির অভিযোগ এনেছে, যা "ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যেকার সমঝোতার স্পষ্ট লঙ্ঘন"।
হিজবুল্লাহর একজন কর্মকর্তা লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন উৎপাদনের সুবিধা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী "ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকদের জন্য যেকোনো হুমকি দূর করতে এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার যেকোনো প্রচেষ্টা রোধ করতে কাজ করবে", এতে বলা হয়েছে।
"আপনি যদি এখানকার লোকদের সাথে কথা বলেন, তাহলে তারা আপনাকে বলবে যে এটি সন্ত্রাসবাদ," খোদর বলেন, "ইসরায়েল মধ্যরাতে এবং একটি বড় ধর্মীয় ছুটির প্রাক্কালে লোকদের চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে"।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালামও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে তারা যেন ইসরায়েলকে "তার আগ্রাসন অব্যাহত রাখা" থেকে বিরত রাখেন এবং লেবাননের ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যেতে বাধ্য করেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বৈরুতে হামলার প্রশংসা করেছেন: "আমরা কোনও আপস ছাড়াই যুদ্ধবিরতি নিয়ম প্রয়োগ চালিয়ে যাব এবং কোনও সত্তাকে উত্তরাঞ্চলীয় সম্প্রদায় এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের বিরুদ্ধে হুমকি তৈরি করতে দেব না।"
ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে ১৪ মাসের যুদ্ধে লেবাননে ৪,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে শত শত বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। লেবাননের সরকার এপ্রিলে বলেছিল যে যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৯০ জন নিহত এবং প্রায় ৫০০ জন আহত হয়েছে।
