শিরোনাম
◈ ​বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: প্রয়োজন বাণিজ্য কূটনীতি ◈ বেনাপোল বন্দর উদ্ভীদ সংগনিরোধ ভবনে ল্যাবে জনবল শুণ্য, পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধে ঝুকিতে কৃষিক্ষাত! ◈ জাতিসংঘের সতর্কবার্তা: বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো ◈ আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে : নাহিদ ইসলাম ◈ জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব: সন্দেহ হলেই বাতিল ভিসার আবেদন ◈ অবশেষে গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণবাহী ট্রাক ◈ বাংলা‌দেশ ইমা‌র্জিং দল ও নিউ‌জিল‌্যা‌ন্ডের চার দিনের ম্যাচ ড্র ◈ সালাউদ্দিন আহমেদের কাছে সারজিসের ৩ আহ্বান ◈ ‘ড. ইউনূসকে ঘিরে একটি চক্র’, ভেতরে চার-বাইরে তিন : সংকট ঘনীভূত ◈ ড. ইউনূসের পদত্যাগ তার ব্যক্তিগত বিষয়, বিএনপি পদত্যাগ চায় না: সালাহউদ্দিন আহমদ (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৫, ১১:৩৩ দুপুর
আপডেট : ২৪ মে, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

তালেবানের সঙ্গে দিল্লির যোগাযোগ এখন কীভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে আর কেন?

এল আর বাদল : আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে ভারতের কোনো সরকারের 'রাজনৈতিক যোগাযোগ' শেষবার যখন স্থাপিত হয়, সেটা পঁচিশ বছরেরও আগেকার কথা। কাবুলে তখন ভারতের কোনো দূতাবাস পর্যন্ত ছিল না। তারপরও সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশওয়ন্ত সিং তার আফগান কাউন্টারপার্ট মুল্লাহ্ ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিলকে ফোন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

কারণটা ছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবোঝাই বিমান আইসি ৮১৪-কে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কান্দাহার এয়ারপোর্টে – আর পণবন্দি সেই যাত্রীদের মুক্তি কোন শর্তে হতে পারে, তা নিয়ে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল তালেবান। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা 

সেই একটি বিশেষ সংকটের মুহূর্ত ছাড়া তালেবানের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক তৈরিতে ভারতের দিক থেকে তেমন আগ্রহ কখনোই ছিল না, আর তা অনেকগুলো কারণেই!

এরপর ২০২১ সালের অগাস্টে তালেবান যখন আবার কাবুলের ক্ষমতায় ফিরে আসে, তখন ভারত সে দেশে তাদের সব দূতাবাস ও মিশনেই তালা ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হয়। আফগানিস্তানে ভারতের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও পুরোপুরি থমকে যায়।

তবে বাস্তবতা হলো, এরপরও দু'পক্ষের মধ্যে 'টেকনিক্যাল' ও 'কূটনৈতিক' স্তরে একাধিকবার কথাবার্তা হয়েছে; চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দুবাইতে বৈঠকও করেছেন।
কিন্তু সেই ১৯৯৯ সালের পর ভারত সরকারের কোনো মন্ত্রী তালেবান মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগাযোগ করছেন – এমন ঘটনা আর ঘটেইনি। সেই নজিরও অবশেষে ভাঙল গত সপ্তাহের ১৫ই মে – ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হওয়ার ঠিক পাঁচদিনের মাথায়।

সেদিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানালেন, "সন্ধ্যেবেলায় ভারপ্রাপ্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে খুব ভালো কথাবার্তা হলো। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় তার নিন্দা জানানোকে' ভারত যে গভীরভাবে সম্মান করে, সেটাও জানালেন জয়শঙ্কর।

এবং কোনো দেশের নাম না করে এটাও উল্লেখ করলেন, "সম্প্রতি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর ছড়িয়ে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করার চেষ্টাকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেরকম দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাকেও স্বাগত জানিয়েছি।"

এখানে তার অভিযোগের নিশানা যে ছিল পাকিস্তানের দিকে, তা বুঝতে অবশ্য কোনো অসুবিধা হয়নি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মুম্বাইতে আফগান কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে টুইট করে জানানো হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক যোগাযোগকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় এবং কীভাবে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো যায় – তা নিয়েও দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা ও মতবিনিময় হয়েছে।

শুধু তাই নয়, আফগান ব্যবসায়ী ও রোগীদের যাতে ভারত ভিসা দেয় এবং ভারতের জেলে আটক আফগানদের মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠায় - আলোচনার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি সেই অনুরোধও জানান। কীভাবে দুই দেশ মিলে ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে কাজ করতে পারে, কথা হয় তা নিয়েও।

যে দুটো দেশের মধ্যে একটা ব্যবহারিক কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত নেই, তাদের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে এরকম বিস্তারিত আলোচনা অত্যন্ত বিরল – আর সে কারণেই জয়শঙ্কর ও মুত্তাকির টেলিফোন আলাপ নিয়ে এতটা চর্চা হচ্ছে।

কিন্তু কী সেই ফ্যাক্টর, যা দিল্লি ও কাবুলকে এভাবে কাছাকাছি আনল? দুই দেশ কি এরপর পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির পথে এগোবে? নিজেদের সম্পর্কের ভেতর পাকিস্তান ইস্যুটাই বা দুই দেশ কীভাবে সামলাবে?

আর একটা অস্বস্তিকর প্রশ্ন – সমাজে নারীর অধিকার সঙ্কুচিত করার ব্যাপারে তালেবানের যে ট্র্যাক রেকর্ড, তাতেই বা ভারতের অবস্থান কী হবে? এখনো যে এই সব প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি স্পষ্ট তা নয় – তবে কিছুটা আভাস অবশ্যই পাওয়া যাচ্ছে!

-- তালেবানের নারী নীতি নিয়ে ভারতের অবস্থান কী? --

আজ পর্যন্ত কোনো পশ্চিমা দেশ যে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি, তার প্রধান কারণ সমাজে নারীদের ভূমিকা নিয়ে তালেবানের নীতি – যে নারীরা ঘরের বাইরে বেরোতে পারবেন না, শিক্ষায়-কর্মক্ষেত্রে-খেলাধুলোয় তাদের কোনো যোগদান থাকারই দরকার নেই।

বছরচারেক আগে তালেবান কাবুলের ক্ষমতায় আসার পর আফগান নারীরাও যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন। ব্যাংক, স্কুল-কলেজ বা এনজিওতে যে হাজার হাজার আফগান নারী কাজ করছিলেন তারা এখন আবার ঘরের চার দেওয়ালে আটকা পড়েছেন। যাদের সুযোগ ছিল তারা অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।

এমনকি, আফগানিস্তানের যে নারী ক্রিকেট টিম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল, সেই টিমও কার্যত ভেঙে গেছে – ক্রিকেটাররা কেউ খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন, কেউ লন্ডন বা নিউ ইয়র্ক বা মেলবোর্নে পালিয়ে গেছেন।

একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু ঘটনা হলো আফগানদের যে পুরুষ ক্রিকেট টিমকে ভারত বছরের পর বছর ধরে লালন করেছে এবং দিল্লির কাছে গ্রেটার নয়ডা বা দেরাদুনকে আফগান ক্রিকেটের 'হোম' হিসেবে গড়ে তুলেছে – তারাও কিন্তু সে দেশের নারী ক্রিকেটের এই বিপদে পাশে দাঁড়ায়নি বা দাঁড়াতে পারেনি।

আসলে সমাজে নারীদের প্রতি তালেবানের 'দমনপীড়নের নীতি'টাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে ভারতের জন্য এতদিন সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে থেকেছে।

তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে মনে করাই যেতে পারে, আপাতত সে সব বিষয়গুলো উপেক্ষা করে ভারত এখন নিরাপত্তা ও স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে – আর তালেবানকে রাজনৈতিক পর্যায়েও 'রিচ আউট' করার সেটাই প্রধান কারণ!

পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়ার কথায়, "আমি বলব ভারত এক্ষেত্রে একটা প্র্যাগম্যাটিক বা বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তালেবানের সঙ্গে ডিল করতে চাইছে।"

"বিষয়টা খুব সহজ – ভারত চাইছে আফগান ভূখণ্ডকে যেন কিছুতেই ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার না করা হয়। বিনিময়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত এনগেজমেন্ট ও আফগানিস্তানে মানবিক ত্রাণ ও সাহায্য অব্যাহত থাকবে, এই বার্তাটাই দিতে চাওয়া হচ্ছে," বলছিলেন তিনি।

এই ধরনের কোনো আলোচনায় দু'পক্ষের জন্যই অস্বস্তিকর বিষয় কেউই তুলতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক – আর সে কারণেই বর্তমান আফগান সমাজে নারীদের অবস্থান নিয়ে কোনো কথাও হচ্ছে না।
ভারতের খুব জনপ্রিয় টিভি নিউজ অ্যাংকর পালকি শর্মা সম্প্রতি তার অনুষ্ঠানে এই বিষয়টাকেই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন।

আফগানিস্তানে নারীদের দুর্দশা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আফগানিস্তানের নাগরিকদের মানবাধিকার বা নিরাপদ জীবনযাত্রা নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের কি কোনো উদ্বেগ নেই? নিশ্চয়ই আছে!"

"কিন্তু ভারতের জনগণের নিরাপত্তা, ভালো থাকাটা নিশ্চয়ই ভারতের কাছে অনেক বেশি অগ্রাধিকার পাবে, তাই না? এটাই স্বাভাবিক আর এখন ঠিক এটাই ঘটছে!"

ভারত সরকারের কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরাও একান্ত আলোচনায় এই যুক্তিটাই দিচ্ছেন – যে ভারতের বৃহত্তর ও সার্বিক স্বার্থ দেখতে গিয়েই তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা চলছে, তবে তার মানে এই নয় যে তাদের সব নীতিতেই দিল্লি চোখ বন্ধ করে সায় দিচ্ছে।

তাদের কথায়, এই সম্পর্ক 'শুধু পারস্পরিক প্রয়োজনের তাগিদে – সমমনা বন্ধুদের মধ্যে কিছু নয়'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়