মো. কামরুল ইসলাম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে এখন মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম পড়েছে। নবীনগর পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, সরকারি কলেজ গেইট, সরকারি হাইস্কুল গেইট, আদালত চত্বরের পাশে, লঞ্চ ঘাট, মনু বাবুর ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন কাঁচা তাল নিয়ে বসছেন জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল কাদির, সুজন মিয়া, রুবেল মিয়া, নছর মিয়া, মাছুম মিয়াসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।
তারা প্রতি পিস তালের শাঁস (কাঁচা তাল) বিক্রি করছেন গড়ে ২৫/৩৫ টাকা । উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে - নবীনগরে তাল গাছের সঠিক সংখ্যা জানা নেই । তবে ২১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে শ্যামগ্রাম, রসুল্লাবাদ, রতনপুর, লাউর-ফতেহপুর, সাতমোডা, বিটঘর, শিবপুর, বড়িকান্দি, সলিমগঞ্জ ইউনিয়নে তাল গাছ তুলনামূলক বেশী। নবীনগর পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা মতিউর রহমান জানান- এখন আগের মত তাল গাছ দেখা যায় না।
আগে পাকা তালের রস দিয়ে বিভিন্ন পিঠা বানানো হতো, সে দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। তার পরিবর্তে এখন কাঁচা তালের শাঁস খাচ্ছি। কিছু দিন পর এটিও আর খেতে পারব কিনা জানি না। কেননা যেভাবে তালের গাছ কাটা হচ্ছে তাতে বেশী দিন আর শাঁসও খাওয়া যাবে না"। আগে এক হালি তাল কিনতে পারতাম ৫০-৮০ টাকায়, এখন ১৬০ টাকায় ও মিলছে না। ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন-"তাল একটি মৌসুমী ফল, এটি অনেক সুস্বাদু ও উপকারী।
তাল গাছ কমে যাওয়ায় এখন তালের দাম বেশী। তালের স্বাদ ধরে রাখা ও গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমি সবাইকে তালগাছ লাগানোর অনুরোধ জানাই"। নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা তাল বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদিন সরকারি কলেজের গেটের সামনে তাল বিক্রি করেন। তিনি বলেন-"আমি২৫/২৬ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। এ বছর তালের দাম বেশী, তাল পাওয়া যাচ্ছ না, আমি প্রতি একশত তাল ক্রয় করি ২৭০০ টাকায় এর সাথে যাতায়াত খরচ আছে"। ১২ বছর ধরে তালের ব্যবসা করেন শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের আব্দুল কাদির, তিনি বলেন-"আগে তালের কুড়ি ছিল ১৭০ টাকা। এর পর দাম বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এক কুড়ি কিনা বিক্রি হচ্ছে ৭০০/৭৫০ টাকায়।
আর কাঁচা তালের (শাঁসের তাল) কুড়ি ৫৫০-৬০০ টাকা। তিনি আরো বলেন- আমি প্রতিটা তাল গাছ কিনছি ৩৫০০-৪৫০০ টাকা। প্রতিটা গাছের তাল বিক্রি করছি ৫,৫০০- ৬,৫০০ টাকায়। প্রতিটা গাছে লাভ হয় ২,০০০ -২,৫০০ টাকা"। নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, "তালের শাঁস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, তালে রস ও অনেক উপকারী। তালে রয়েছে ভিটামিন - এ, বি, সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ অনেক খনিজ উপাদানসহ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান।
তালের রস দিয়ে গুড়, মিছরি তৈরি হয়। বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে তাল গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাল গাছ বাড়ানোর কোন প্রকল্প নাই। তবে বাংলাদেশ সুগারক্রপ ইনষ্টিটিউট তাল নিয়ে কাজ করছে"। দিন দিন তালগাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন - "গ্রামাঞ্চলের মানুষ তাল গাছের গুরুত্ব না বুঝে গাছ কেটে ফেলে। যেহেতু তাল গাছে বছরে একবার ফল দেয় এবং লাভও কম, সে কারণে তালগাছ কেটে ফল বা কাঠের গাছ রোপন করছে। তালের বীজ থেকে চারা হতে সময় লাগে প্রায় ১ বছরের মত, তাই কোন নার্সারী তালের চারা করতে চায় না। তাল গাছ উঁচু হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বজ্রপাত) থেকে মানুষের জীবন রক্ষা করে। বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে যায়। এ ছাড়া ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে -পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে"।