শিরোনাম
◈ নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি: নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ◈ যমুনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরে জানাবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন ◈ আন্দোলনের পর সেনানিবাসে আশ্রয়: ২৪ রাজনীতিবিদ কে কোথায় ◈ বৃক্ষমেলায় হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণ, আতঙ্কে এলাকাবাসী ◈ আজ পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসবে বিএনপি ও জামায়াত ◈ ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত ◈ ​বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: প্রয়োজন বাণিজ্য কূটনীতি ◈ বেনাপোল বন্দর উদ্ভীদ সংগনিরোধ ভবনে ল্যাবে জনবল শুণ্য, পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধে ঝুকিতে কৃষিক্ষাত! ◈ জাতিসংঘের সতর্কবার্তা: বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো ◈ আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে : নাহিদ ইসলাম

প্রকাশিত : ২৪ মে, ২০২৫, ১২:৪০ রাত
আপডেট : ২৪ মে, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক: সমঝোতা না হামলার পথে?

পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে শুরু হওয়া আলোচনা ক্রমেই উতপ্ত হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে দুই দেশ পারমাণবিক কর্মসূচিতে চার বার আলোচনায় বসেছে। এই আলোচনাকে ফলপ্রসূ বলা হলেও তেহেরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা কমছে না।

২০১৫ সালে ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তি দেশের সঙ্গে তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওই ছয় দেশের মধ্যে ছিল- যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া। 

ওই চুক্তির মাধ্যমে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে বের হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিময়ে তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। 

কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর। ২০১৭ সালে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পরই ইরানের সঙ্গে হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে ওয়াশিংটনকে প্রত্যাহার করে নেন। ওই সময়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, পরমাণু চুক্তি যথাযথভাবে হয়নি এবং ইরান এর মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে। চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরই তেহেরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।  

এরপর থেকে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে মনোযোগী হয়। বলা হচ্ছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে তেহেরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।  

এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সেটিও চীনের মধ্যস্থতায় ২০২৩ সালে সমাধান হয়ে যায়। যদিও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। 

পরবর্তীতে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে বসার পর থেকেই ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এমনকি হামলার হুমকিও দেন। 

যদিও ইরান ট্রাম্পের হামলার ভয়ে বিন্দু মাত্র টলেনি। বরং তারা পারমাণবিক কর্মসূচিতে ট্রাম্পের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা না করে পরোক্ষভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে তিনি তেহেরানে হামলা চালাবেন। তবে এই হামলার জন্য তিনি ইসরায়েলকে ব্যবহার করতে চান।

ইরানও সাফ জানিয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তারা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে না। কারণ এটা তাদের জাতীয় ইস্যু। এছাড়া তেহেরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। দেশটি তাদের সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়াম পারমাণবিক জ্বালানি খাতে ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের চাওয়া পারমাণবিক জ্বালানির জন্য যে ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়, সেটিও তারা বাইরে থেকে আমদানি করুক। কিন্তু এ তেহেরান প্রস্তাবে রাজি নয়। 

ইরানের ভাষ্য যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শূন্যের কোঠায় রাখার সিদ্ধান্তেই অটল থাকে তাহলে চলমান আলোচনা কোনো ফল বয়ে আনবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা মনে করি না যে এটা কোনো ফল বয়ে আনবে। আমরা জানি না কী হবে।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভয়াবহ হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে তেল আবিবও গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হামলায় এ পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১ লাখের বেশি মানুষ। 

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়েছে তেল আবিবে পাল্টা হামলায় শুরু করেছিল ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তবে লেবাননে গত বছর ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর একাধিক শীর্ষ কমান্ডার নিহতের ঘটনায় কার্যত দুর্বল হয়ে পড়ে গোষ্ঠীটি। তবে হামলা এখনও অব্যাহত রেখেছে হুতিরা।

এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়। ফলে সেখানেও কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইরান। কারণ আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে বছরের পর বছর সহযোগিতা করেছেন তেহেরান ও মস্কো। এমন অবস্থায় আঞ্চলিক চাপে রয়েছে তেহেরান। 

শুধু তাই নয়, গত বছরের এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় তেহেরানের কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়। এরপর এ হামলার প্রতিশোধ নিতে ওই বছরের অক্টোবরে তেল আবিবে ড্রোন হামলা চালায় ইরান। 

তেহেরান দাবি করে, তারা ইসরায়েলের ৩০০ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। যদিও এর জবাবে তেল আবিবও ইরানের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। 

এদিকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক কর্মসূচিতে আলোচনার পঞ্চম ধাপ আবার শুরু করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাতে হামলার চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যদি ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় তাহলে আইনগতভাবে এর দায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বর্তাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলকে ব্যবহার করে হামলা না চালিয়ে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে সমঝোতাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা ভবিষ্যত বলে দিবে।  

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়