যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৬০টি জেট কিনবে কাতার। মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে কাতার এয়ারওয়েজের জন্য এসব জেট কেনা হবে। গতকাল বুধবার কাতার সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।
এর আগে সৌদি আরব থেকে উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল গ্যাস সমৃদ্ধ দেশটিতে গিয়ে বিলাসবহুল সংবর্ধনায় সিক্ত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কাতারের জেট বহর ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ানকে গার্ড দিয়ে নিয়ে আসে। বিমানবন্দরে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান কাতারের আমির। পৌঁছানোর পরই বিলাসবহুল লুসাইল প্রাসাদে গিয়ে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তিনি।
বিমান উপহার বিতর্কে যুক্তি দিলেন ট্রাম্প
কাতারের কাছ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বিমান গ্রহণ করার বিষয়ে বেশকিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এখন কিছু লোক বলছে, দেশের জন্য উপহার গ্রহণ তোমার উচিত নয়। আমার কথা হলো, কেন আমি উপহার নেব না? আমরা অন্যদের দিচ্ছি। কেন আমি উপহার গ্রহণ করব না?’ ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন, বোয়িং-এর বিমান তৈরির কাজ শেষ করতে ‘কয়েক বছর সময় লাগবে’। তিনি বলেন, ‘যখন তারা কাজটি শেষ করবে তখন এটি চমৎকার হবে। কিন্তু সেটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার’। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয় যে ‘বিশ্বকে সুরক্ষিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র অঘোষিতভাবে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করে বলে’ ঐ উপহারটি অফার করা হয়েছে কি-না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের ঐ অঞ্চলটির নিরাপত্তা দিচ্ছি অনেক বছর ধরে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘কাতারের বিমান আমাদের সহায়তা করবে, কারণ ৪০ বছরের পুরোনো বিমানের জায়গায় নতুন একটি বিমান আসবে’। এর আগে রবিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন কাতারি রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বোয়িং জাম্বো জেট বিমান গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিমানটির ভেতরে কিছু পরিবর্তন আনার পর অস্থায়ীভাবে এটি এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলেও এসব খবরে জানানো হয়।
নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘প্রতিরক্ষা বিভাগ ৪০ বছরের পুরোনো এয়ার ফোর্স ওয়ানকে সাময়িকভাবে প্রতিস্থাপনের জন্য বিনা মূল্যে একটি ৭৪৭ বিমান উপহার পাচ্ছে, একটি অত্যন্ত প্রকাশ্য এবং স্বচ্ছ লেনদেন।’ সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি কাতারের দিক থেকে একটি চমৎকার পদক্ষেপ, আমি এটির অনেক প্রশংসা করি। আমি কখনোই এই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করব না।’ এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প বলেছিলেন, এয়ার ফোর্স ওয়ানের জন্য নতুন দুটি জেট বিমান পেতে বোয়িং দেরি করায় তিনি খুশি নন।
সিরিয়াকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বললেন ট্রাম্প
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকের সময় তাকে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লিয়াভিট এ তথ্য দিয়েছেন। ট্রাম্প যে পাঁচটি শর্ত বা নির্দেশনা সিরিয়াকে দিয়েছেন সেগুলো হলো: ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আব্রাহার অ্যাকর্ড বা আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করা, সব বিদেশি সন্ত্রাসীকে সিরিয়া থেকে চলে যেতে বলা, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী’দের সিরিয়া ত্যাগে বাধ্য করা, কথিত ইসলামিক স্টেট গ্রুপের পুনরুত্থান বন্ধের যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করা এবং উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত ডিটেনশন সেন্টারগুলোর দায়িত্ব নেওয়া।
প্রসঙ্গত, আব্রাহাম অ্যাকর্ড হলো আরব-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসরাইল, আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মধ্য একটি চুক্তি, যা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এ চুক্তিটি হয়েছিল ইসরাইলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্য নিয়ে। এদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গেও চুক্তি করতে চান, তবে সেজন্য দেশটিকে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র থাকা যাবে না। —বিবিসি ও সিএনএন