পেহেলগাম হামলার জবাব কখন, কিভাবে দেয়া হবে তা নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যেই ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওদিকে সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করার পর বাগলিহার ড্যাম ব্যবহার করে চেনাব নদীর পানি বন্ধ করে দেয় ভারত। বান্দিপোরের কাছে কৃষ্ণগঙ্গা ড্যামেও একই রকম পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
রাজেশ কুমার সিংয়ের সঙ্গে মোদির বৈঠকের একদিন আগে এয়ার মার্শাল অমর প্রিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদি। এরই মধ্যে তিনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়ে কথা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ১২ দিন কেটে গেছে। এই হামলায় ক্ষুব্ধ ভারত। প্রধানমন্ত্রী মোদি সতর্ক করেছেন যে, যারাই এই হামলা চালিয়েছে এবং মদত দিয়েছে তাদের কাউকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে না। এমন শাস্তি দেয়া হবে যা কেউ কল্পনাও করতে পারেন না। গত কয়েকদিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী এবং নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেছেন মোদি।
ভারত কি পদক্ষেপ নিচ্ছে এ বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতীয়দেরকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আপনাদের প্রত্যাশা অবশ্যই বাস্তবায়ন ঘটবে। আমাদের সাহসী সেনারা সব সময়ই ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। দেশের সীমান্ত নিরাপদ রাখতে সেনাদের সঙ্গে আমাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। যারা আমাদের দেশকে হুমকি দেয় তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দেয়া আমার কর্তব্য। অন্য এক খবরে বলা হয়েছে, ভারত অল্প সময়ের জন্য বাগলিহার ড্যামে পানি বন্ধ রেখেছিল। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করা হয়েছে। সিন্ধু নদের পানি চুক্তির আওতায় যেহেতু এই ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে, তাই ভারতের এ উদ্যোগ ছিল অস্থায়ী। এই চুক্তির আওতায় সীমিত পরিমাণ পানি ধরে রাখা যায়। পরে সেই পানি ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় সৃষ্ট দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনার মধ্যে ভারত যা করেছে তা হলো ইসলামাবাদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত।
উল্লেখ্য, বাগলিহার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে চেনাব নদীর ওপর। এটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী। পানিচুক্তি অনুযায়ী, এই নদীর পানি কোনোরকম বিধিনিষেধ ছাড়াই ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান। অন্যদিকে কৃষিকাজ, পানিবিদ্যুত উৎপাদনসহ আরও কিছু কাজে এই পানি ব্যবহার করতে পারে ভারত। সেখানে বাগলিহার প্রজেক্ট চালানো হচ্ছে পানিবিদ্যুতের জন্য।
এর অবস্থান জম্মু ও কাশ্মীরের রামবন জেলায়। এ প্রকল্পে পানির সংকট নেই। সেখানে বর্তমানে ৯০০ মেগাওয়াট পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এ প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে এবং দ্বিতীয় দফার কাজ শেষ হয় ২০১৫ সালে। কৃষ্ণগঙ্গা নদীর ওপর আছে কৃষ্ণগঙ্গা প্রজেক্ট। এর অবস্থান নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে গুরেজ এলাকায়। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। এই দুটি প্রজেক্টেরই বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান। তাদের অভিযোগ এতে যে ডিজাইন ও পরিমাপক ব্যবহার করা হয়েছে তা পানিচুক্তিকে লঙ্ঘন করে। তারা বলেছে, বাগলিহার ড্যামে যে পরিমাপক ব্যবহৃত হয় তা কোনো সংঘাতের সময় ভারতকে কৌশলগত সুবিধা দেবে।