দ্য কনভারসেশন অবলম্বনে : সমসাময়িক সময়ে টিউমার আর ক্যানসার শব্দ দুটি বহুল ব্যবহৃত ও শ্রুত। শারীরিক জটিলতা দুটির মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও পার্থক্য ব্যাপক ও বিস্তৃত। কিন্তু আমরা প্রায়ই এদের একই অর্থে ব্যবহার করি। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, অনেক সময় ডাক্তাররাও রোগীদের বোঝাতে ‘টিউমার’, ‘ম্যাস’, ‘লেশন’ বা ‘স্পট’—এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন। রোগীরাও সঠিক অর্থ না জেনে বিভ্রান্ত হন। তাই এ রোগদুটির পার্থক্য বোঝা ও সঠিক শব্দ ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।
অক্সফোর্ড অভিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী, শরীরের ভেতর বা বাইরে যেকোনো অস্বাভাবিক ফোলাকে টিউমার বলা হয়। শরীরের ফ্যাট, পেশি, হাড়, স্নায়ু কিংবা গ্রন্থি—প্রায় সব জায়গায় টিউমার তৈরি হতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সব টিউমার ক্যানসার নয় আবার সব ক্যানসারও টিউমারের মতো গিঁট তৈরি করে না।
টিউমার দুই ধরনের হতে পারে—বিনাইন (অ-ক্যানসার) ও ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসার)। লিপোমা বা হেম্যাঙ্গিওমার মতো বিনাইন টিউমার একেবারেই ক্ষতি করে না। অনেকসময় চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। আবার জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা পিটুইটারি গ্রন্থির অ্যাডিনোমার মতো কিছু বিনাইন টিউমার অবস্থানের কারণে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলো ক্যানসার না হলেও অস্ত্রোপচার দরকার হয়।
অন্যদিকে, যখন শরীরের স্বাভাবিক কোষে জেনেটিক পরিবর্তন বা মিউটেশন আসে তখন ক্যানসার তৈরি হয়। এর ফলে কোষ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। ক্যান্সার কোষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তারা আশপাশের টিস্যুতে ঢুকে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে—যাকে মেটাস্টেসিস বলে। এ আক্রমণ ও ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে বিনাইন টিউমার থেকে আলাদা করে।
টিউমার বা ক্যানসার—দুটিই প্রায়ই গিঁট বা ফোলার মাধ্যমে ধরা পড়ে। অনেক সময় রোগী নিজেই কোনো অস্বাভাবিক ফোলা টের পান, আবার কখনো উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করার সময় টিউমার ধরা পড়ে। টিউমারের উপসর্গ নির্ভর করে তার অবস্থান ও কোষের ধরনের ওপর। যেমন, খাদ্যনালীতে টিউমার হলে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা এমআরআইয়ের মতো ইমেজিং পরীক্ষা প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি সূচ দিয়ে নমুনা নেয়া বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করে প্যাথলজিস্ট দেখেন সেটা বিনাইন নাকি ম্যালিগন্যান্ট।
তবে সব ক্যানসারে গিঁট তৈরি নাও হতে পারে। স্তন, ত্বক বা ফুসফুসের ক্যান্সারে গিঁট তৈরি হলেও রক্তের ক্যান্সার যেমন লিউকেমিয়া সাধারণত কোনো পিণ্ড তৈরি করে না।
চিকিৎসার ক্ষেত্রেও পার্থক্য দেখা যায়। বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট উভয় টিউমারই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরানো যায়। তবে ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক বেশি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। কারণ এগুলো ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। সে সঙ্গে, পরবর্তী পর্যায়ে জীবনহানির সম্ভাবনাও বাড়ে। তাই অপারেশনের পাশাপাশি রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির মতো পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে এমন চিকিৎসাও দরকার হতে পারে।
শব্দের ব্যবহারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, কারণ ‘ম্যাস’, ‘লেশন’ বা ‘স্পট’ বললে অনেক রোগীই বুঝতে পারেন না আসলে তা ক্যানসার কিনা। ‘ক্যান্সার’ শব্দটির সঙ্গে যে ভয়, উদ্বেগ ও মৃত্যুঝুঁকির ভাবনা জড়িয়ে আছে, তার কারণে ডাক্তাররা অনেক সময় বাক্যটিকে নরম করে বলতে চান। কিন্তু এ অস্পষ্টতা রোগীদের আরো বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় পরিষ্কারভাবে বলা জরুরি—এটি কি টিউমার? টিউমারটি কি বিনাইন নাকি ম্যালিগন্যান্ট?
অনুবাদ: বনিকবার্তা