নাকে প্রায়শই ব্যথা অনুভব করছেন? এটি একটি বিরল ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে, যা সাম্প্রতিক সময়ে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও ক্যান্সারের অবস্থান উদ্বেগজনক, তবে এটি পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, যা আরও চিন্তার কারণ।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের নাক ও সাইনাস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা মহিলাদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তাহলে নাকের ক্যান্সার কী এবং এর লক্ষণগুলো কীভাবে শনাক্ত করবেন? চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
নাকের ক্যান্সার কী?
নাক ও সাইনাস ক্যান্সার তখনই দেখা দেয় যখন নাকের গহ্বর বা প্যারানাসাল সাইনাসে ক্যান্সার কোষ তৈরি হয়। যদিও এটি অত্যন্ত বিরল, এটি মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের একটি ধরন। বিশেষভাবে, নাকের ক্যান্সার শুরু হয় নাকের পিছনের খোলা অংশে, যা মুখের ছাদের উপরের অংশ বরাবর চলমান এবং গলার সঙ্গে যুক্ত। প্যারানাসাল সাইনাস হল হাড়ের ছোট-বড় বায়ু ভর্তি স্থান, যা নাকের গহ্বরের সঙ্গে সংযুক্ত।
নাকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বিষয়ক কারণ
কিছু পেশার মানুষের মধ্যে নাকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ তারা নির্দিষ্ট পদার্থ শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এর মধ্যে আছে: কাঠের ধূলিকণা, বস্ত্রের ধূলি, চামড়ার ধূলি, ময়দা, নিকেল ও ক্রোমিয়াম ধূলি, সরিষার গ্যাস এবং রেডিয়াম। এছাড়া ধূমপান, হিউম্যান পাপিলোমাভাইরাস (HPV) সংক্রমণ, বংশগত রেটিনোব্লাস্টোমা, সাদা জাতি হওয়া, পুরুষ হওয়া এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সও ঝুঁকির কারণ।
নাকের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কী কী?
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, নাকের ক্যান্সারের লক্ষণ সাধারণত একপাশে প্রকাশ পায়। এর মধ্যে থাকতে পারে: নাক বন্ধ থাকা ও ভরাট অনুভূতি, চোখের উপরে বা নিচে ব্যথা, নাকের একপাশে অবরোধ, নাক থেকে রক্তপাত, পুঁজ নির্গমন, মুখ বা দাঁতের সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া, চোখে ক্রমাগত পানি আসা, দৃষ্টি পরিবর্তন, কানের চাপ বা ব্যথা, এবং মুখ, তালু বা নাকের ভেতরে গঠন বা ফোলা।
নাকের ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষা
সাধারণত নাকের ক্যান্সারের সনাক্তকরণ হয় লক্ষণের ভিত্তিতে। চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা ইতিহাস মূল্যায়ন করবেন। সন্দেহ হলে একজন অটোলারিংগোলজিস্ট বা ENT বিশেষজ্ঞের কাছে প্রেরণ করা হবে। এছাড়া এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পিইটি স্ক্যান ও বায়োপসির মাধ্যমে শরীরের ভেতরের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়।
নাকের ক্যান্সারের চিকিৎসা
সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি এবং টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি নাকের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, নাকের ক্যান্সারের রোগীদের জন্য সব SEER পর্যায় মিলিয়ে ৫ বছরের আপেক্ষিক বেঁচে থাকার হার প্রায় ৬১ শতাংশ।
নাকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব কি?
সব ধরনের নাকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
নাকের ক্যান্সার একটি বিরল রোগ হলেও নির্দিষ্ট পেশার পুরুষদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি বিষয়ক কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন থাকা রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণে সহায়তা করতে পারে এবং জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: জনকণ্ঠ