রক্তের উচ্চ কোলেস্টেরলকে বলা হয় গোপন শত্রু। এটি ধীরে ধীরে আপনার শরীরকে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো বিপজ্জনক অবস্থার দিকে নিয়ে যায়, যা অনেক সময় আপনি টেরই পান না। টের যখন পান, তখন আর করণীয় তেমন থাকে না। তাই কোলেস্টেরলের মতো গোপন শত্রুকে আপনার চিনে নিতে হবে প্রথমেই, যখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। খবর: মায়ো ক্লিনিক
রক্তে দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে—খারাপ ও ভালো। খারাপটা হলো লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল। আর ভালোটাকে বলে হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন, যা এইচডিএল নামে পরিচিত।
কানাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ম্যাডিসন ব্রাউন এমন কিছু গবেষণাভিত্তিক পদ্ধতির কথা বলেছেন, যার জন্য আপনার কোনো ওষুধপত্র খেতে হবে না, কিন্তু খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমবে প্রাকৃতিকভাবেই। এসব এতই সাধারণ ও ছোট যে আপনি জেনে অবাকও হতে পারেন।
১. দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার আরও খান: খাবারে আঁশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি পেটের ভেতর জেলের মতো একধরনের বস্তু তৈরি করে, যা রক্তে মেশার আগেই কোলেস্টেরলকে এর ফাঁদে আটকে ফেলে।
ওট, ডাল, চিয়া ও তিসি বীজের মতো অনেক খাবারই আঁশযুক্ত ও পানিতে দ্রবণীয়। এসব দ্রবণীয় আঁশ খাবারের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে হজমপ্রক্রিয়ায় ঢুকতে বাধা দেয় এবং বর্জ্য হিসেবে শরীরের বাইরে বের করে দেয়।
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা যায়, দিনে মাত্র ৫–১০ গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় প্রায় ৫ শতাংশ।
২. খাবার প্লেটকে ‘প্ল্যান্ট’ দিয়ে পরিপূর্ণ করুন: এখানে ‘প্ল্যান্ট’ হচ্ছে উদ্ভিজ্জ খাবার। বলা হচ্ছে, আপনার খাবারের প্লেটে পুষ্টিপূর্ণ উদ্ভিজ্জ খাদ্য বেশি রাখুন। ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার শুধু খাবারের প্লেটকে বৈচিত্র্যপূর্ণই করে না; বরং এসব খাবারে স্টেরল ও স্ট্যানলের মতো উদ্ভিজ্জ চর্বি যোগ করে। এই স্টেরল ও স্ট্যানল রক্তে কোলেস্টেরল শোষণ কমায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কোলেস্টেরল শিক্ষা কর্মসূচি অনুযায়ী, খাবারে দৈনিক ২ গ্রাম উদ্ভিজ্জ স্টেরল থাকলে তা ১০ শতাংশ পর্যন্ত এলডিএল কমায়। উদ্ভিজ্জ খাবারে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টও থাকে, যা ধমনি ভালো রাখে। এটি আঁশ তৈরি করে, যা কোলেস্টেরল নিষ্কাশনে সহায়ক।
৩. ক্ষতিকর চর্বি বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ: সাধারণত প্রক্রিয়াজাত ও ভাজাপোড়া খাবারে ক্ষতিকর চর্বি থাকে। এটি রক্তে ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে এলডিএলের মাত্রা বাড়ায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন খাবারে ক্ষতিকর চর্বি গ্রহণ বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তারা জলপাইয়ের তেল, অ্যাভোকাডো, আখরোটসহ চর্বিযুক্ত মাছ খেতে উৎসাহিত করেছে।
৪. সক্রিয় থাকুন প্রতিদিন: কোলেস্টেরলের পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন ব্যায়ামাগারে যেতে হবে, এমন নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সপ্তাহে ৫ দিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটুন। দ্রুত হাঁটা আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখবে। একই সঙ্গে এটি শরীরে রক্ত চলাচলও বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম কোলেস্টেরলকে রক্ত থেকে যকৃতে পাঠায়। সেখানে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একে দেহ থেকেই বের করে দেওয়া হয়।
৫. পরিশোধিত শর্করা ও চিনি কমান: বেশি পরিশোধিত বা প্রক্রিয়াজাত শর্করা ও চিনি শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ায়। ট্রাইগ্লিসারাইড হলো রক্তে জমে থাকা চর্বি। এটি নির্দিষ্ট পরিমাণে দরকারি। কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা হৃদ্রোগের উচ্চঝুঁকি তৈরি করে।
২০১৪ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোক তাঁদের ক্যালরির ২৫ শতাংশের বেশি চিনি থেকে গ্রহণ করেন, তাঁদের হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। চিনিযুক্ত পানীয়, ক্যান্ডি, পেস্ট্রি ও পাউরুটি খাওয়া বাদ দিলে শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে এবং রক্তচাপ ঠিক থাকে।
শেষকথা: মনে রাখতে হবে, কোলেস্টেরল কমানোর এই প্রক্রিয়ায় কিন্তু রাতারাতি সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি চর্চার বিষয়। কাজেই এই পদ্ধতি অভ্যাস করুন এবং কোলেস্টেরল প্রাকৃতিকভাবেই কমিয়ে ফেলুন। অনুবাদ: প্রথম আলো।