শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে রেলের ক্যারেজ কারখানায় যন্ত্রাংশ চুরি, ময়লার গাড়িতে পাচার ◈ আমরা আবারও গোপালগঞ্জ যাবো, এই যাওয়া শেষ যাওয়া নয়: নাহিদ ইসলাম ◈ শ্যামগ্রাম সলিমগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা, প্রতিদিনই ঝুঁকিতে যাত্রীরা ◈ ডলারের দাম কম ব্যাংকে, বাড়তি খোলা বাজারে ◈ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে দেশীয় গ্যাসফিল্ডগুলোর উৎপাদন ◈ অবশেষে পদত্যাগ করলেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ◈ ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক অর্থ উপার্জন করলেও তা বুমেরাং হবে ◈ আওয়ামীলীগ সরকারের আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল: ইসি ◈ ২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ◈ এনসিপির ওপর হামলা পরিকল্পিত: বিএনপি

প্রকাশিত : ১৭ জুলাই, ২০২৫, ০২:৩৬ রাত
আপডেট : ১৭ জুলাই, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পেটের ক্যানসার: নীরব ঘাতকের যে লক্ষণগুলো আগেভাগেই জানান দেয়

পেটের ক্যানসার বা স্টমাক ক্যানসারকে প্রায়শই "নীরব ঘাতক" বলা হয়। কারণ এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সাধারণ যে, অনেকেই সেগুলোকে সাধারণ হজমের সমস্যা বা পেটের গোলযোগ ভেবে ভুল করেন। রোগটি যখন গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছায় এবং শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।

কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, শরীর অনেক আগে থেকেই এই মারাত্মক রোগের বিষয়ে সতর্ক সঙ্কেত দিতে শুরু করে। যদি এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা যায় এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়, তবে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ নির্ণয় করে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

চলুন, পেটের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

প্রাথমিক পর্যায়ে পেটের ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণ

এই লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন ধরে (সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি) চলতে থাকলে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত:

১. অস্বাভাবিক হজমের সমস্যা: নিয়মিত অম্বল, গ্যাস, বদহজম বা বুকজ্বালার সমস্যা, যা সাধারণ ওষুধে সহজে সারে না।

২. পেটের উপরের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি: পেটের উপরের দিকে হালকা কিন্তু একটানা ব্যথা বা চাপের অনুভূতি হওয়া।

৩. অল্পতেই পেট ভরে যাওয়া: সামান্য পরিমাণ খাবার খাওয়ার পরেই পেট ভরে গেছে বলে মনে হওয়া (Early Satiety)।

৪. ক্ষুধামান্দ্য: খিদে পাওয়া সত্ত্বেও খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা বা খাবারে অরুচি।

৫. খাবার গিলতে অসুবিধা (ডিসফ্যাজিয়া): গলায় কিছু আটকে আছে বা খাবার নামতে কষ্ট হচ্ছে এমন অনুভূতি।

৬. বমি ভাব ও বমি: প্রায়শই বমি বমি ভাব লাগা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারণ ছাড়াই বমি হওয়া।

৭. ওজন কমে যাওয়া: কোনো ধরনের ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই необясниমভাবে শরীরের ওজন দ্রুত কমতে থাকা।

৮. পেট ফাঁপা: খাওয়ার পর পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাওয়া বাแน่น হয়ে থাকা।

৯. শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি: সামান্য কাজেই অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়া।

১০. কালো রঙের মল (মেলেনা): আলকাতরার মতো কালো, চটচটে মল হওয়া, যা পেটের ভেতর রক্তক্ষরণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

রোগ ছড়িয়ে পড়লে যেসব গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়

ক্যানসার যখন অ্যাডভান্সড স্টেজে পৌঁছে যায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আরও মারাত্মক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়:

  • বমির সাথে রক্ত: বমির মধ্যে তাজা রক্ত বা কফির গুঁড়োর মতো কালচে কিছু আসা।

  • জন্ডিস: চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, যা লিভারে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেয়।

  • পেটে পানি জমা (অ্যাসাইটিস): পেটে পানি জমে পেট ফুলে যাওয়া।

  • রক্তস্বল্পতা: দীর্ঘদিনের রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেওয়া এবং অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।

  • ত্বকের নিচে চাকা: লিম্ফ নোডে (লসিকা গ্রন্থি) ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে ত্বকের নিচে গাঁট বা চাকা অনুভূত হতে পারে।

পেটের ক্যানসারের ঝুঁকির কারণসমূহ

কিছু বিষয় পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন:

  • হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) সংক্রমণ: এটি পেটের আলসার ও ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ।

  • বয়স ও লিঙ্গ: সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি।

  • খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত লবণাক্ত, ঝলসানো, ভাজা-পোড়া এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস। ফল ও শাকসবজি কম খাওয়া।

  • ধূমপান ও মদ্যপান: নিয়মিত ধূমপান ও মদ্যপান পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ায়।

  • পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে কারও পেটের ক্যানসার হয়ে থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

  • স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজনও একটি অন্যতম ঝুঁকির কারণ।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, উপরের লক্ষণগুলোর এক বা একাধিক যদি দীর্ঘ সময় ধরে দেখা দেয়, তবে সেগুলোকে সাধারণ পেটের সমস্যা ভেবে চেপে রাখা উচিত নয়। বিশেষ করে, বয়স ৪০-এর বেশি হলে এবং পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আরও বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

পেটের সামান্য অস্বস্তিও হতে পারে বড় বিপদের প্রথম সঙ্কেত। তাই লক্ষণগুলো অবহেলা না করে দ্রুত একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। এন্ডোস্কোপি (Endoscopy) এবং বায়োপসি (Biopsy)-এর মতো সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে পেটের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই নির্ণয় করা সম্ভব।

সচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। আগেভাগেই সজাগ হন, সুস্থ থাকুন।


সূত্র:

  • আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি (American Cancer Society)

  • ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, যুক্তরাজ্য (NHS, UK)

  • মায়ো ক্লিনিক (Mayo Clinic)

  • ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়