এম আর আমিন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে ক্যারেজ ও ওয়াগন মেরামত কারখানা থেকে নিয়মিতভাবে মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও স্ক্র্যাপ মালামাল চুরির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ময়লার গাড়ির আড়ালে কারখানা থেকে চক্রবদ্ধভাবে এসব মালামাল পাচার করা হচ্ছে।
রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই চুরির সঙ্গে কারখানার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বাইরের একটি চক্র জড়িত। বিষয়টি সম্পর্কে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবহিত হলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে চুরি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ ১৬ জুলাই চুরির একটি ঘটনা ধরা পড়ার পর এক ট্রাকচালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক রাজীব কুমার দেবনাথ মালামাল চুরির এবং চালক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, স্ক্র্যাপ চুরির দায়ে চালক মো. রাসেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ট্রাকে করে কারখানা থেকে ময়লা অপসারণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু ট্রাকে গড়ে ৫০০-৭০০ কেজি লোহাজাতীয় স্ক্র্যাপ পাচার করা হয়, যার মাসিক পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কেজি এবং বছরে প্রায় ৬০ হাজার কেজি। বাজারমূল্যে যা প্রায় ৩০ লাখ টাকার সমান।
১৬ জুলাই আমবাগান ভাঙ্গাপুল এলাকার এক স্ক্র্যাপ দোকানে অভিযান চালিয়ে রেলের মালামাল জব্দ করে খুলশী থানা পুলিশ। ওসি মো. আফতাব হোসেন জানান, মালামালগুলো রেলের স্ক্র্যাপ বলেই কর্মকর্তারা শনাক্ত করেছেন, তবে মামলার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মালগুলো ‘রাবিশ’ উল্লেখ করে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কারখানার পক্ষ থেকে রেল নিরাপত্তা বাহিনীকে (আরএনবি) দায়মুক্ত করার চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে। আরএনবির বিভাগীয় কমান্ড্যান্ট মো. শহিদুল্লাহ বলেন, “ময়লার সঙ্গে কিছু ছোটখাটো নাট-বল্টু বেরিয়ে থাকতে পারে, এটিকে চুরি বলা যাবে না।” তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দোকানে পাওয়া স্ক্র্যাপগুলো এতটাই স্পষ্টভাবে রেলের মাল যে এগুলোকে ‘রাবিশ’ বলা বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা মাত্র।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানায় প্রতিবছর সাড়ে ৯০০ যাত্রীবাহী ও প্রায় ৭ হাজার মালবাহী বগির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজ হয়। ফলে এখানে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ ও স্ক্র্যাপ জমা থাকে, যা চক্রের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।