নিজস্ব প্রতিবেদক : মার্কিন ডলারের দাম ব্যাংকে কমলেও উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। রাজধানীর খোলা বাজারে এখন প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২৫ টাকা ৫০ পয়সায়। আর ব্যাংকে ডলারের দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা।
রাজধানীর মানি এক্সচেঞ্জ বুথগুলোতে দেখা যায়, বৈদেশিক মুদ্রার কেনা-বেচা করতে আসা মানুষের সংখ্যা কম। কলারম্যানদের হাঁক-ডাকও আগের মত নেই। দিলখুশা, পুরানা পল্টন ও গুলশানে একই চিত্র দেখা যায়। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ডলার মজুদ রয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের সংখ্যা কম।
এদিকে চাহিদার বিপরীতে ডলার বেশি জমার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে দুইদিনে ৪৮ কোটি ডলার কিনেছে। এ জন্য টাকার বিপরীতে ডলারের দাম নেমেছে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায়। এই দাম এক মাস আগেও ছিল ১২৩ টাকার বেশি।
ডলারের দামের পতন অব্যাহত থাকায় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে কেনা এসব ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যুক্ত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পর থেকে ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক চর্চা মেনে নিজেদের মধ্যে নিয়মিত ডলার বেচা-কেনা করছে। রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের ডলার কেনায়ও বেশ সংযত। অর্থাৎ তারা কম দামে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ) শর্ত ছিল, ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এই শর্ত পালনে একদামের দিকে এগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আর পণ্য আমদানিতে, রপ্তানিতে কিংবা প্রবাসী আয়ের ডলারের দামে ভিন্নতা নেই। দামের এই অভিন্নতাও ডলারের সরবরাহ বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশের মুদ্রাবাজারে গত মঙ্গলবার ডলার সর্বোচ্চ ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয় এবং সর্বনিম্ন ১২০ টাকা ৮০ পয়সায় কেনা হয়। একদিনের ব্যবধানে বুধবার ডলার আরও খানিক বেড়ে ১২১ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৬০ পয়সা ওঠে। কিন্তু বাড়তি দামই ধরে রাখে খোলা বাজারে।
এ প্রসঙ্গে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এমএস জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকগুলো পারবে, কিন্তু আমরা পারব না। আমাদের ডলারের ভরসা বিদেশে ফেরত যাত্রী। ব্যাংক থেকে আমরা কোনো ডলার পাই না, পাওয়ার কথাও না। তবে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের জোগান বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ার ফলে ডলার সারপ্লাস হচ্ছে। অনেকদিন পর ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ডলার জোগানের প্রভাব মানি এক্সচেঞ্জারদের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। বদলে যাওয়ার পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে ডলারের গ্রাহকও কমে গেছে। আগে বাড়তি দামে কেনার কারণে আমরা ডলারের দাম কমাতে পারছি না। আগের বাড়তি দামের ডলার বিক্রি শেষ হয়ে গেলে আমরাও কম দামে ডলার বিক্রি করতে পারব।
বৈশ্বিকভাবে ডলারের দাম কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে ডলারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এটা একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।