শিরোনাম
◈ বিএনপি ক্ষমতায় এলে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করা হবে: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ◈ চীন-পাকিস্তানকে নিয়ে ‘ভারতবিরোধী’ কোনও জোট করছে না বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হলে লাভ কার? ◈ ঋণের শর্তে মতবিরোধে আটকে ৪ বিলিয়ন ডলারের ৯ চীনা প্রকল্প ◈ টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর, ক‌তোটা আপন ক‌রে নি‌তে পে‌রে‌ছে বাংলাদেশ ◈ ট্রাম্পের অপমানের পর এবার স্যুটে দেখা মিললো জেলেনস্কির (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশের প্রতি ইরানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ◈ বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়াকে প্রত্যাহার ◈ প্রথম দিনেই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বিপুল অনুপস্থিতি, ৪৩ জন বহিষ্কার ◈ ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ ধন্যবাদ দিয়ে ভোট বিপ্লবের বার্তা নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানির (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২৫, ১২:৩২ দুপুর
আপডেট : ২৬ জুন, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভুতুড়ে নয়, বৈজ্ঞানিক কারণেই ঘটে ‘বোবায় ধরা’, জানুন সহজ সমাধান

নিজস্ব সংবাদদাতা, স্বাস্থ্য ডেস্ক: গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। আপনি জেগে আছেন, চারপাশের সবকিছু টের পাচ্ছেন, কিন্তু শরীর নাড়াতে পারছেন না। চিৎকার করতে চাইলেও গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। বুকের ওপর মনে হচ্ছে কেউ চেপে বসে আছে, আর ঘরে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে এক ভয়ঙ্কর ছায়ামূর্তি। এই অবস্থাকেই গ্রামবাংলায় ‘বোবায় ধরা’ বলা হয়। অনেকেই একে ভৌতিক বা অলৌকিক ঘটনা বলে মনে করেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এর পিছনে রয়েছে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এই অবস্থার নাম ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’ (Sleep Paralysis)।

স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা কী?

ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী একটি অবস্থাই হলো স্লিপ প্যারালাইসিস। চিকিৎসকদের মতে, আমরা যখন ঘুমাই, তখন মূলত দুটি পর্যায়ে ঘুমাই— REM (Rapid Eye Movement) এবং NREM (Non-Rapid Eye Movement)। REM পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। এই সময় আমাদের মস্তিষ্ক শরীরকে সাময়িকভাবে অসাড় বা প্যারালাইজড করে দেয়, যাতে স্বপ্নের ঘোরে আমরা হাত-পা ছুঁড়ে নিজেদের বা পাশে থাকা কাউকে আঘাত না করি। এই অবস্থাকে ‘REM Atonia’ বলা হয়।

স্লিপ প্যারালাইসিস তখনই ঘটে, যখন REM পর্যায় শেষ হওয়ার আগেই আমাদের মস্তিষ্ক জেগে ওঠে। অর্থাৎ, আপনার চেতনা ফিরে এলেও শরীর তখনও সেই প্যারালাইজড অবস্থাতেই থেকে যায়। ফলে, আপনি সজাগ থেকেও শরীর নাড়াতে বা কথা বলতে পারেন না। এই நிலை কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এর লক্ষণগুলো কী কী?

  • সচেতন থাকা সত্ত্বেও শরীর নাড়াচাড়া বা কথা বলতে না পারা।

  • বুকের ওপর প্রচণ্ড চাপ বা দমবন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি।

  • মনে হওয়া যে ঘরে অন্য কেউ উপস্থিত আছে (Presence Hallucination)।

  • ভয়ঙ্কর কিছু দেখা বা শোনা, যেমন— ছায়ামূর্তি, অশরীরী কণ্ঠ ইত্যাদি (Hypnagogic or Hypnopompic Hallucinations)।

  • মৃত্যুভয় বা তীব্র আতঙ্ক।

প্রধান কারণ ও ঝুঁকি কাদের বেশি?

স্লিপ প্যারালাইসিস যে কারোরই হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রধান কারণগুলো হলো:

  • অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস: ঘুমের নির্দিষ্ট সময় না থাকা বা অপর্যাপ্ত ঘুম।

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: যারা দুশ্চিন্তা বা অ্যাংজাইটিতে ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।

  • চিৎ হয়ে ঘুমানো: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা চিৎ হয়ে ঘুমান তাদের স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

  • অন্যান্য ঘুম সংক্রান্ত রোগ: নারকোলেপসি (Narcolepsy) বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যায় ভোগা রোগীদের ঝুঁকি বেশি।

  • কিছু ঔষধের প্রভাব: নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এটি হতে পারে।

সহজ সমাধান ও প্রতিকার

স্লিপ প্যারালাইসিস ভীতিকর হলেও এটি সাধারণত বিপজ্জনক নয়। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

১. প্রতিরোধের উপায়:

  • ঘুমের রুটিন তৈরি করুন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

  • মানসিক চাপ কমান: নিয়মিত ব্যায়াম, যোগা বা মেডিটেশন করে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

  • শোয়ার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন: চিৎ হয়ে না ঘুমিয়ে পাশ ফিরে শোয়ার অভ্যাস করুন।

  • স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: ঘুমানোর ঘর যেন শান্ত, অন্ধকার ও আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

  • ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার: ঘুমানোর অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকে চা, কফি বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।

২. স্লিপ প্যারালাইসিস চলাকালীন করণীয়:

  • শান্ত থাকুন: মনে রাখবেন এটি একটি সাময়িক অবস্থা এবং দ্রুতই কেটে যাবে। আতঙ্কিত হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর মনে হতে পারে।

  • মনোযোগ সরান: শরীরের কোনো একটি অংশে মনোযোগ দিন, যেমন— পায়ের বা হাতের আঙুল অল্প নাড়ানোর চেষ্টা করুন। অনেক সময় সামান্য চেষ্টাতেই এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায়।

  • কাশার চেষ্টা করুন: এটিও শরীরকে অসাড় অবস্থা থেকে বের করে আনতে সাহায্য করতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি স্লিপ প্যারালাইসিস খুব ঘন ঘন হতে থাকে এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব পড়ে, যেমন— ঘুমাতে ভয় পাওয়া বা দিনের বেলাতেও অতিরিক্ত ঘুম পাওয়া, তাহলে অবশ্যই একজন ঘুম বিশেষজ্ঞ (Sleep Specialist) বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার

‘বোবায় ধরা’ কোনো भूत বা প্রেতের কাজ নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কেরই একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। এর পেছনের বিজ্ঞানকে জানলে অহেতুক ভয় কেটে যায় এবং সহজ কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


সূত্র:

  • National Health Service (NHS), UK: Sleep Paralysis Overview.

  • Mayo Clinic: Sleep Paralysis - Symptoms and Causes.

  • Sleep Foundation: What Is Sleep Paralysis?

  • WebMD: Sleep Paralysis - Causes, Symptoms, and Treatments.

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়