মহসিন কবির: ফের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রাদুর্ভাব বেড়েছে ভারত, চীন ও জাপানে। এইচএমপিভি এর ভাইরাস এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে মারাও গেলে অনেকজন।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। যদিও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এইচএমভির প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে তাঁদের।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশেও হঠাৎ করোনা বাড়তে শুরু করেছেন। গত ৫ জুন নতুন করে একজনের মৃত্যুও হয়। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে চারজনের করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ৩ জনের শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে ছয়জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছে। তবে মৃত্যু হয়নি।
রোববার (৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪২ জনে। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জন। মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫০০ জন।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের ফিরতি যাত্রায় যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং মাস্ক পরার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চীনের গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই নতুন স্ট্রেইনটি যদি মানুষের শরীরে প্রবেশের ক্ষমতা অর্জন করে, তবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এমনকি ফের লকডাউন পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে বিশ্ব। এই ভাইরাসটি মূলত মার্স (MERS) গোত্রের বলে মনে করা হচ্ছে, যা অতীতে এক-তৃতীয়াংশ রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।
ভারতে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩৬৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে কেরালায়, এরপর দিল্লি ও গুজরাটে। পশ্চিমবঙ্গেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ভারতে যে ভ্যারিয়েন্টগুলো (যেমন NB.1.8.1 এবং JN.1) ছড়াচ্ছে সেগুলোর মারণক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম হলেও নতুন HKU5-CoV-2 যদি মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম হয়, তবে পরিস্থিতি দ্রুতই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ভাইরোলজিস্ট ড. মাইকেল লেটকো জানান, HKU5-CoV-2 ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে হালকা মিউটেশন হলেই এটি মানবদেহের ACE-2 রিসেপ্টর কোষে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে। যা করোনাভাইরাসের মতো দ্রুত সংক্রমণের পথ খুলে দেবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সতর্কতা না দিলেও চীনা বিজ্ঞানীদের এই পর্যবেক্ষণ নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন সতর্কতা, নজরদারি এবং পূর্বপ্রস্তুতি।
এর আগে, সিআইএ-দাবি করেছিল যে, করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে উহানের ল্যাবরেটারি থেকে। তবে সেই দাবি খারিজ করেছে চিন। উল্লেখ্য ২০১৯ সালে করোনার প্রথম কেসটি দেখা যায় চিনের উহানে। তারপর থেকে তা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়।