পানি পান করা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোষে পুষ্টি পরিবহণ, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ও হাড়ের সন্ধিতে তরল পদার্থ সরবরাহের মতো কাজে সাহায্য করে পানি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পানের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ এর নানান উপকার রয়েছে। মেডিকেল নিউজ টুডের এক প্রতিবেদন চিকিৎসকরা পানি পানের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। নিচে সকালে পানি পান করার কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ এবং উপকারিতার বর্ণনা দেয়া হলো:
১. ওজন কমাতে সহায়ক
অনেকেই মনে করেন, সকালে পানি পান করা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিবার খাওয়ার আগে ৫০০ মিলিলিটার পানি পান করতেন, তারা ১২ সপ্তাহে তুলনামূলক বেশি ওজন কমিয়েছেন। এটি মূলত খাবারের আগেই পেট কিছুটা ভরায় এবং খাবারের পরিমাণ কমে যায়।
অন্যদিকে, ঠান্ডা পানি পান করলে শরীর সেটিকে উষ্ণ করতে ক্যালোরি বার্ন করে, একে বলে থার্মোজেনেসিস। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় ৫০ জন মেয়ের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, দিনে তিনবার খাবারের আগে পানি পান করলে তাদের ওজন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু সকালে পানি পান করলেই ওজন কমে যাবে—এমন কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই।
২. মানসিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
শরীরে হালকা পানিশূন্যতাও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। ২০১৯ সালের একটি পর্যালোচনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি পান করলে মানসিক পারফরম্যান্স কিছুটা ভালো হয়। আবার, যেসব শিক্ষার্থী শরীরের জলীয় ভারসাম্য হারিয়েছিল, তারা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অভিযোগ করেছে, এবং পুনরায় পানি পান করার পর এসব সমস্যা কিছুটা হ্রাস পায়। সুতরাং সকালে পানি পান করলে দিনের শুরুতে মস্তিষ্ক সজাগ থাকে।
৩. মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে
২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা সাধারণত কম পানি পান করেন, তারা পানি পান বাড়ানোর পর মেজাজে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। অন্যদিকে, যারা সাধারণত প্রচুর পানি পান করেন, কিন্তু পানির পরিমাণ হঠাৎ কমিয়ে দিয়েছেন, তারা উদ্বিগ্নতা, বিরক্তি ও মানসিক অস্বস্তি অনুভব করেছেন। তাই সারা দিনজুড়ে পর্যাপ্ত পানি পান করলে মেজাজ স্বাভাবিক ও ভালো থাকে।
৪. ত্বকের জন্য উপকারী
ত্বকের প্রায় ৩০% পানি থাকে, যা ত্বককে নমনীয় ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সাধারণত কম পানি পান করেন, তারা পানি পান বাড়ানোর পর তাদের ত্বক কিছুটা হাইড্রেটেড দেখিয়েছে। ২০১৮ সালের আরেক গবেষণাতেও ত্বকের বাইরের স্তর কিছুটা ময়েশ্চারাইজড হওয়ার প্রমাণ মেলে। তবে মনে রাখা দরকার, শুধু পানি পান করেই বলিরেখা বা বয়সের ছাপ পুরোপুরি আটকানো সম্ভব নয়। সূর্যরশ্মি, বংশগত প্রভাব এবং পরিবেশের বিরূপ প্রভাবও বড় ভূমিকা রাখে।
৫. শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলিতে সহায়ক
কিডনি: পর্যাপ্ত পানি কিডনিকে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
মূত্রনালী: ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পানি বেশি খাওয়া মূত্রনালিতে পাথর প্রতিরোধ করতে পারে।
হৃদযন্ত্র ও রক্তচাপ: ২০১৯ সালের গবেষণায় বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত পানি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যাবলির জন্য জরুরি।
সন্ধি ও হাড়: পানি শরীরের জয়েন্ট লুব্রিকেন্টের উপাদান, যা সন্ধিতে ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে।
সম্ভাব্য ঝুঁকি: অন্যদিকে সকালে পানি পানের বেশ কিছু ঝুঁকির দিক নিয়েও চিকিৎসকরা আলোচনা করেছেন। অতিরিকিত পানে পান এবং কিছু ভুলের কারণে এটা সমস্যা হতে পারে।
যেমন
সকালে পানি পান করা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি চা বা কফির পরিবর্তে পানি বেছে নেন। তবে শুধু সকাল নয়, সারা দিনজুড়ে পর্যাপ্ত পানি পান করাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং পানিশূন্যতার ঝুঁকি কমবে।