শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনার দুঃশাসনে খালেদা জিয়ার ওপর নেমেছিল নিপীড়নের ঝড়: তারেক রহমান ◈ মনোনয়ন পেলেন বিএনপির ১১ নারী প্রার্থী, কে কোন আসনে? ◈ পর্তুগালের নতুন আইন, অভিবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ  ◈ নির্বাচনের তফসিল এখনো চূড়ান্ত নয়—গণমাধ্যমকে সতর্ক করলেন ইসি সচিব ◈ ব্রাদার্স ইউ‌নিয়ন‌কে ৫-১ গো‌লে হারা‌লো বসুন্ধরা কিংস  ◈ নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়  'ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ'  ◈ একইদিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট: প্রস্তুত ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র, ঝুঁকিপূর্ণ ৮ হাজারের বেশি ◈ কাতার নয়, খালেদার জন্য জার্মানি থেকে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ◈ চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হবে: মির্জা ফখরুল ◈ দুর্যোগ মোকাবিলায় ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা শক্তিশালী করতে সরকারের নতুন পরিকল্পনা

প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:৪৫ বিকাল
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গণহারে বদলি শুরু হতেই কর্মবিরতি স্থগিত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

বদলি শুরু করার পর কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। আগামী রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ। 

এতে বলা হয়, নৈতিকতা, মানবিকতা এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আগামী রোববার থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলবে। উভয় পরিষদের আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। 

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সামছুদ্দীন, খায়রুন নাহার লিপিসহ ৪২জন শিক্ষক নেতাকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহফুজা খাতুনের সই করা এক আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মানিকগঞ্জে, বাংলাদেশ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদকে নোয়াখালী সদর থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে, দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মাহবুবর রহমানকে জয়পুরহাট থেকে নওগাঁয় বদলি করা হয়েছে। খায়রুন নাহার লিপি ও মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ গত রাতে সমকালের কাছে তাদের বদলি হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। 

জানা গেছে, কেবল কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা নয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের পদে থাকা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দশম গ্রেডের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রায় সব নেতাকে বদলি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপপরিচালকরা এসব বদলি আদেশে স্বাক্ষর করেন। 

নোয়াখালী জেলার এক প্রাথমিক শিক্ষক নেতা সমকালকে বলেন, কেবল নোয়াখালী জেলারই ৪৯ শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। সারাদেশ মিলে আগামী কয়েক দিনে এ সংখ্যা সহস্রাধিক হবে বলে জানা গেছে। আন্দোলনের কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির এবারই প্রথম। 

গত বুধবার থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। বর্তমানে তারা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বর্তমান বেতন গ্রেড ১১তম। আন্দোলনের মুখে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দুই ধাপ বাড়িয়ে ১১তম করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

শিক্ষকরা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে ২২ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

চলমান আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক সামছুদ্দীন এবং আরও চার সহকারী শিক্ষক। তাদের নেতৃত্বে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ উত্থাপিত তিন দাবি হলো– সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।

সব পরীক্ষা না হওয়ায় অভিভাবকদের ক্ষোভ-উদ্বেগ 

রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আদনান মাহবুব শোভন। গত সোমবার থেকে তার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিন থেকেই শিক্ষকদের একাংশ পরীক্ষা বর্জন করে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার তদারকি ও চাপাচাপিতে কোনোভাবে বুধবার পর্যন্ত তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল থেকে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। শোভন জানায়, পরীক্ষা শেষে বেড়াতে যাওয়ার কথা। বাবা-মাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। তারা এই অনিশ্চয়তার নিরসন চান। 

শোভনের মতোই দশা সারাদেশের ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারটি, আবার কোনো বিদ্যালয়ের মাত্র তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে ১ ডিসেম্বর পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তাদের চারটি বা তিনটি আর যাদের ২ ডিসেম্বর পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ তিনটি পরীক্ষা নেওয়া গেছে। 

সূচি অনুসারে, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুদের ছয়টি আর তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আটটি বিষয়ের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। বিষয়গুলো হলো– ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বাংলা, প্রাথমিক বিজ্ঞান, প্রাথমিক গণিত, চারু ও কারুকলা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং সংগীত। 

অভিভাবকরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর বেশির ভাগ পরীক্ষা এখনও বাকি। তাই সন্তানদের নিয়ে শীতের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা এখনও তারা করতে পারছেন না। 

গতকালও দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। এতে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে গতকাল বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। 

কোথাও কোথাও প্রধান শিক্ষক ও প্রশাসনের সহায়তায় পরীক্ষা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পিরোজপুরের নেছারাবাদে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে গতকাল দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কয়েক জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিলেও অনেক জায়গায় পরীক্ষা হয়নি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে গেটের তালা ভেঙেছেন। পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদের গেটে কর্মবিরতিতে থাকা একজন শিক্ষকের সঙ্গে এক অভিভাবকের মারামারি হয়েছে। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন আরেক শিক্ষক।

গতকাল প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষার চতুর্থ দিনে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে অনেক স্থানে উপজেলা শিক্ষা অফিসে অবস্থান নেন সহকারী শিক্ষকরা। অনেক জায়গায় শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও পরীক্ষার ডিউটি করেননি। এতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। 

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ সমকালকে গতকাল বিকেলে বলেছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের যৌথ অনলাইন বৈঠকে অভিভাবকদের ক্ষোভের বিষয়কে বিবেচনা করা হতে পারে। 

কর্মসূচি স্থগিতের আগে শিক্ষক নেতা খায়রুন নাহার লিপি সমকালকে বলেছিলেন, আমাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দাবি বাস্তবায়নে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কর্মসূচি থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। 

সারাদেশে শিক্ষকদের কর্মবিরতি, ভোগান্তি 

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গতকাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পাঁচটি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেননি শিক্ষকরা। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ২০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়নি। এতে শিক্ষার্থী অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফুলবাড়িয়ার দুই হাজার ১৬৬ ছাত্র দুই হাজার ৭২০ ছাত্রী অনিশ্চয়তায় পড়ে শিক্ষক আন্দোলনে। 

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১২৯ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছেন। বিদ্যালয়ে শাটডাউনসহ মানববন্ধন করেছে মেহেরপুরের গাংনীর শতাধিক শিক্ষক। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চতুর্থ দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। নাটোরের সিংড়ায় ২১০টি স্কুলের শিক্ষকরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। 

সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়