মনজুর এ আজিজ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জ্বালানি লোডের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর কন্টেইনমেন্টের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে নকশা অনুযায়ী কন্টেইনমেন্টের (সুরক্ষা ব্যুহ) অভেদ্যতা ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তামান নিশ্চিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে ব্যবহৃত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্প্রেসারের মাধ্যমে নকশা অনুযায়ী কন্টেইনমেন্টের অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি করা হয়।
তবে এর লক্ষ্য হল কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কন্টেইনমেন্টের ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পেলে তা কতটুকু সহ্য করতে সক্ষম তা নির্ণয় করে নিয়ন্ত্রণ করবে। পরমাণু জ্বালানি লোডিংয়ের পূর্বে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, কারণ কোনও বিপর্যয় ঘটলে যাতে কন্টেইনমেন্টই শেষ সুরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলা যায়।
জানা যায়, কন্টেইনমেন্ট মূলত একটি অতি সুদৃঢ় কাঠামো যা নির্মাণে ব্যবহৃত হয় প্রিস্ট্রেসড রিইনফোর্সড কংক্রিট এবং এর ভেতরের দেয়ালে থাকে একটি শক্ত ইস্পাতের আবরণ। এটির নকশা এমনভাবে করা হয় যাতে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে তেজস্ক্রিয় পদার্থ রিয়্যাক্টর কমপার্টমেন্টের বাইরে বের হতে না পারে। সমস্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ এই কন্টেইনমেন্টের ভেতরেই আবদ্ধ ও সুরক্ষিত অবস্থায় থাকতে পারে। বাহ্যিক বড় কোনও আঘাত ও বিপর্যয় রোধ করতে সক্ষম এই কন্টেইনমেন্ট বা সুরক্ষা ব্যুহ।
এদিকে শিগগিরই রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে কিছু ‘হট মিডিয়া টেস্ট’ চালানো হবে, উদাহরণ স্বরূপ কুল্যান্ট সার্কিটকে নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা এবং বাষ্প উৎপাদন। অন্যান্য নিরাপত্তা প্যারামিটারগুলো চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করা হবে, যেমন সক্রিয় অবস্থায় বাষ্প নির্গমণকারী ডিভাইসের নিরাপত্তা। এই পরীক্ষার সময় বেশ কিছু অনাকাংখিত শব্দ তৈরি হবে যা সম্পূর্ণ পূর্ব নির্ধারিত। এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। রসাটম নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে, তাই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হল সকল নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করা।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দু’টি ৩+ প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ চুল্লি স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১,২০০ মেগাওয়াট। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রসাটমের প্রকৌশল বিভাগ জেনারেল কন্ট্রাকটর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
উল্লেখ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৩ সালে ১২০০ মেগাওয়াট, ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট (১২০০ মেগাওয়াট) উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন প্রস্তুত না হওয়ায় উৎপাদনের তারিখ দফায় দফায় পেছানো হচ্ছে। তবে শিগগিরই এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট চালু করা হবে বলে আশার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।