শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনার পতনের পর ঐক্যে ভাঙন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিয়ে সন্দিহান মাহাথির; ড. ইউনূসকে বললেন ‘বড় মাপের মানুষ’ ◈ লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নাপিত পিতা-পুত্র আটক, কী ঘটেছে সেখানে? ◈ ভোলা ছাত্রদল নেত্রী ইপ্সিতার নদীতে লাশ উদ্ধার: আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা, রহস্য ঘিরে ধোঁয়াশা ◈ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ায় হতাশ ট্রাম্প, প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়লেন অশ্রাব্য ভাষায় (ভিডিও) ◈ ন্যাটো সম্মেলনের আগে ট্রাম্পকে মহাসচিব রুটের ‘অসাধারণ’ বার্তা ফাঁস, প্রশংসায় ভরপুর চ্যাট ঘিরে বিতর্ক ◈ ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় নিহত ইরানের শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী ও পরিবার ◈ নগর ভবনের সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার আসিফ মাহমুদের: “কিছু হলেই আমাকেই দায় দাও” ◈ বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বোঝার চেষ্টা করছেন ◈ রাশিয়ায় দালালের খপ্পরে পড়ে যুদ্ধে প্রাণ গেল নরসিংদীর সোহানের ◈ ইরানে আক্রমণের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে প্রশ্ন, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির দাবি হাস্যকর

প্রকাশিত : ২৪ জুন, ২০২৫, ০৮:২৭ রাত
আপডেট : ২৫ জুন, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই : উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ওপর নজর রাখা হচ্ছে, তবে এ মূহুত্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিদ্যুৎ ভবনে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসির মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

উপদেষ্টা এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি অনেক বেশি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন, অন্যথায় কোনো চুক্তি অনুমোদিত হবে না। 

উপদেষ্টা উপস্থিত তিন রাষ্ট্রদূতকে চুক্তির স্বাক্ষরের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহ সৃষ্টি করবে। এই চুক্তি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধের মধ্যে একটি তেলের জাহাজ বন্দরে এসেছে, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত মজুদ হাতে রয়েছে। আমাদের সুবিধা হচ্ছে সরবরাহকারীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসেন। সোর্স মধ্যপ্রাচ্য হলেও অনেক সরবরাহকারী রয়েছে যারা সিঙ্গাপুর থেকে, কেউ মালয়েশিয়ার মার্কেট থেকে সরবরাহ করেন। সে কারণে তেলের সরবরাহ নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। তবুও আমরা যুদ্ধের ওপর নজর রাখছি।

লাফার্জহোলসিমের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ চুক্তিটা শুধু একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি না। বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো জায়গা সেটি বিশ্বের কাছে বার্তা দেওয়া। এখানে একটি সুবিধা রয়েছে, অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় গ্যাসের চাপ কম হয়, তবে লাফার্জের অবস্থান ছাতকে হওয়ায় গ্যাসের চাপ বেশি হবে। তিনি জানান, আগে চুক্তির যে অসুবিধা ছিল তা এখন অপসারণ করা হয়েছে এবং এই চুক্তিতে দুটি নতুন বিষয় সংযুক্ত হয়েছে: নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) অধীনে আনা হয়েছে, ফলে বিইআরসির মাধ্যমে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি হবে।

ভর্তুকিও বাড়ানো হবে না, আবার দামও বাড়বে না বলা হচ্ছে। তাহলে ঘাটতি সমন্বয় হবে কীভাবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কিছু কৌশল ও বিপিসির কাছে কিছু অর্থ রয়েছে, প্রয়োজন হলে সেখান থেকে সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, গ্যাস খাতে অনেক ভর্তুকি রয়েছে। আমরা আর ভর্তুকি বাড়াতে পারবো না। কাফকোর সঙ্গেও চুক্তি রিভিউ করা হচ্ছে। তাদেরকে মার্কেট প্রাইসে গ্যাসের দাম দিতে হবে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমরা নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি পুরাতন বিনিয়োগকে ধরে রাখতে কাজ করছি। লাফার্জ হচ্ছে গ্লোবাল লিডার তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই চুক্তির মাধ্যমে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া। যারা এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে তারা হয়তো তাদের কাছে জানার চেষ্টা করবে। তাদের কাছে যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পায়। তাদের ফিডব্যাক থেকে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলে আমরা মনে করি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার লাফার্জের অবদান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। তিনি এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে উৎসাহিত করেন এবং এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এই চুক্তি বাংলাদেশে শিল্পের জন্য একটি স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। এখানে অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। সেখানে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা পুরণে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিজফ্রিয়েড রেঙ্গলির বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই চুক্তি ও প্রযুক্তি বাংলাদেশে এলডিসি গ্রাজুয়েশনে অনেক ভূমিকা রাখবে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে লাফার্জের অবদানের প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, লাফার্জহোলসিম এই খাতে আরও বেশি অবদান রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

স্পেনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে তাদের পরোক্ষ বিনিয়োগে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি উল্লেখ করেন যে, স্পেন গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের সাথে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ স্পেনের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। 

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসির সিইও ইকবাল চৌধুরী বলেন, তারা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে এবং এই ধরনের আরও চুক্তি হলে তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, এটি শুধু গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও নতুন সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া লাফার্জহোলসিম স্কিল জনশক্তিও তৈরি করছে। যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। ফলে তারা বিশ্বের অনেক দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।

হোলসিম সুইজারল্যান্ড ও লাফার্জ প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি। বিশ্বের ৬৪টি দেশে লাফার্জের ও ৭০টি দেশে হোলসিমের কার্যক্রম ছিল। কোম্পানি দু’টি ২০১৪ সালে একীভূত হয়ে লাফার্জহোলসিম নাম ধারণ করে। বাংলাদেশে সিলেটের ছাতকে লাফার্জহোলসিমের সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির নারায়নগঞ্জের মেঘনাঘাটে দুটি ও খুলনার মোংলায় একটি গ্রাইন্ডিং স্টেশন রয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিটির সঙ্গে ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি ২০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি সম্পাদন করে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড। এতে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার চুক্তি করা হয়।

চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে থেকেই গ্যাসের দাম নিয়ে নানা টানাপোড়েন শুরু হয়। ইতঃপূর্বে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম নিয়ে বিইআরসিতে সালিশি মামলা বিদ্যমান। অবশেষ বিইআরসি ঘোষিত নতুন দর ৪০ টাকা (শিল্প) এবং ৪২ টাকা (ক্যাপটিভ) ঘনমিটার হিসাবে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। আগের চুক্তির দাম নির্ধারিত থাকলেও এবার বলা হয়েছে, বিইআরসি সময়ে সময়ে ঘোষিত দরের ফর্মুলা অনুযায়ী বিল আদায় হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়