শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনার পতনের পর ঐক্যে ভাঙন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিয়ে সন্দিহান মাহাথির; ড. ইউনূসকে বললেন ‘বড় মাপের মানুষ’ ◈ লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নাপিত পিতা-পুত্র আটক, কী ঘটেছে সেখানে? ◈ ভোলা ছাত্রদল নেত্রী ইপ্সিতার নদীতে লাশ উদ্ধার: আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা, রহস্য ঘিরে ধোঁয়াশা ◈ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ায় হতাশ ট্রাম্প, প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়লেন অশ্রাব্য ভাষায় (ভিডিও) ◈ ন্যাটো সম্মেলনের আগে ট্রাম্পকে মহাসচিব রুটের ‘অসাধারণ’ বার্তা ফাঁস, প্রশংসায় ভরপুর চ্যাট ঘিরে বিতর্ক ◈ ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় নিহত ইরানের শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানী ও পরিবার ◈ নগর ভবনের সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার আসিফ মাহমুদের: “কিছু হলেই আমাকেই দায় দাও” ◈ বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বোঝার চেষ্টা করছেন ◈ রাশিয়ায় দালালের খপ্পরে পড়ে যুদ্ধে প্রাণ গেল নরসিংদীর সোহানের ◈ ইরানে আক্রমণের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে প্রশ্ন, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির দাবি হাস্যকর

প্রকাশিত : ২৫ জুন, ২০২৫, ০২:০১ রাত
আপডেট : ২৫ জুন, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নাপিত পিতা-পুত্র আটক, কী ঘটেছে সেখানে?

বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা লালমনিরহাটের সদর থানার গোশলা বাজার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী দুই ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে স্থানীয় একদল ব্যক্তি হেনস্থার পর পুলিশ ওই দুজনকে আটক করেছে।

আটক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, চুল কাটানোর পর টাকা কম দেয়া নিয়ে তর্কের জের ধরে ধর্ম অবমাননার মিথ্যে অভিযোগ তুলে ওই দুজনকে পরিকল্পিতভাবে হেনস্থা করা হয়েছে।

ওই দুই ব্যক্তি সম্পর্কে পিতা ও পুত্র এবং তারা পেশায় নরসুন্দর, যা বাংলাদেশে নাপিত হিসেবেই পরিচিত। তারা দুজনে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে একটি সেলুন পরিচালনা করে আসছিলেন।

জেলার সদর থানা পুলিশ বলছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে একদল ব্যক্তি পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে হেনস্থা করার পর তারা ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে।

পরেশ চন্দ্র শীলের পুত্রবধূ দিপ্তী রানী শীল বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার শ্বশুর ও স্বামী সম্পূর্ণ নির্দোষ। "তারা মিথ্যে অভিযোগ করেছে। আমার শ্বশুর আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে টাকা নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়েছিলো তাদের মধ্যে," বলছিলেন তিনি।

এ ঘটনায় স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। ওই মসজিদের খতিব ও মামলার একজন সাক্ষী মোঃ জোবায়ের হোসেইন বলেছেন, "ওই দুই নাপিত নবীকে অসম্মান করে কথা বলেছেন। এর প্রত্যক্ষদর্শীও আছে"।

মামলার এজাহারে তাকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি নিজে ও মামলার বাদী কেউই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন। তারা অভিযোগকারী ব্যক্তি ও অন্যদের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনে নিশ্চিত হয়েছেন।

"ইমাম সাহেব মামলা করেছেন কারণ অভিযোগকারীর সাথে তার ইমাম-মুসল্লি সম্পর্ক আছে," বলছিলেন তিনি।

রোববার এই হেনস্থা এবং আটকের ঘটনা ঘটলেও মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, 'ধর্ম অবমাননা'র ঘটনাটি ঘটেছিল তিনদিন আগে শুক্রবার।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ সাজু মিঞা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা ইতোমধ্যেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়।

যদিও গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে অনেকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অনেকগুলোতেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগ পরে আর প্রমাণ করা যায়নি।

কী ঘটেছে সেখানে

লালমনিরহাট থানায় ঘটনার যে প্রতিবেদন হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বালাটারী এলাকার মোঃ নাজমুল ইসলাম নামে এক তরুণ সেখানকার গোশলা বাজারে হানিফ পাগলার মোড়ে পরেশ চন্দ্র শীলের সেলুনে চুল কাটতে গিয়েছিলেন গত শুক্রবার।

মামলার অভিযোগে মি. ইসলামের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে যে চুল কাটার সময় পরেশ চন্দ্র শীল তাকে নবী ও দাঁড়ি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।

এর এক দেড় মাস আগে সতের বছর বয়সী আরেক কিশোরকেও মি. শীল ওই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন বলে মামলার বলা হয়েছে।

"পরে নাজমুল ইসলাম ও ওই কিশোর স্থানীয় মুসল্লি ও জনগণদের জানালে ২২শে জুন দুপুর সোয়া দুইটায় মুসল্লি ও জনগণ ওই সেলুনে গিয়ে পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে আটক করলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে পুলিশ ওই দুই ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয়," বলে পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ সময় খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানা গেছে।

পরে এ ঘটনায় স্থানীয় আল-হেরা জামে মসজিদের ইমাম মোঃ আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

ওই মসজিদের খতিব ও মামলার একজন সাক্ষী জোবায়ের হোসেইন বলেছেন, তারা স্থানীয়দের নিয়ে এ ঘটনার পর থানা ঘেরাও করেছিলেন।

ঘটনার তিন দিন পরে কেন লোকজন সেলুনে হামলা করলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার এবং সেদিন সবাই জুমার নামাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।

"পরে দুজনের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে মুসল্লি ও স্থানীয়রা রবিবার সেলুনে গিয়ে তাদের আটক করে। এরপর পুলিশ ওদেরকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে," বলছিলেন মি. হোসেইন।

কিন্তু আর কী জানা গেছে, পরিবার কী বলছে

পরেশ চন্দ্র শীলের পুত্রবধূ দিপ্তি রানী শীল বলছেন সোমবার তিনি তার শ্বশুর ও স্বামীর সাথে সাক্ষাত করেছেন।

"আমি আমার শ্বশুরের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। তিনি পরিষ্কার বলেছেন এ ধরনের কিছু হয়নি সেখানে। একটি ছেলে চুল কাটিয়ে টাকা কম দিয়ে যাচ্ছিলো। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে ছেলেটি পরে দেখিয়ে দিবো বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়," বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

তিনি বলেন এরপর তারাই রোববার এসে দোকান ভাংচুর করে এবং তার শ্বশুরকে মারধর করতে শুরু করলে তার স্বামী বাধা দেয়। পরে দুজনকেই মারধর করে পুলিশে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে ওই বাজারের আরও কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, চুল কাটার সময়ে ধর্ম নিয়ে আলাপচারিতার সরাসরি কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি।

পরেশ চন্দ্র শীল দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে সেলুন চালিয়ে আসছেন। সে কারণে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে যা ঘটেছে সেটি অনেককে বিস্মিত করেছে।

যদিও জোবায়ের হোসেইন বলছেন, ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন তাদের পরিচিত আছেন। তারাও ঘটনা সম্পর্কে তাদেরকে নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ পরিদর্শক সাজু মিঞা বলছেন, অভিযোগ ওঠার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুজনকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। "এখন তদন্ত চলছে। স্থানীয় মুসল্লিরা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করেছেন। আশা করি তদন্তেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ওদিকে দিপ্তি রানী শীল অভিযোগ করেছেন ওই ঘটনার পর তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তবে কারা এই হুমকি দিচ্ছে সেটি তিনি জানাতে পারেন নি।

"আমি জানি না তারা কেন হুমকি দিচ্ছে। তবে বাড়িতে থাকতেই ভয় পাচ্ছি এখন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়