সিএনএন: গভীর গুহার স্তরে মাটি খুঁড়ছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। হঠাৎ এক পাথরে লাল রঙের গোল দাগ। খালি চোখে দেখলে মনে হতে পারে— কোনো শিশু হয়তো খেলার ছলে রঙ লাগিয়ে রেখেছে। কিন্তু সেই পাথরের বয়স প্রায় ৪৩ হাজার বছর!
স্পেনের সেগোভিয়া এলাকার সান লাসারো গুহায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে পাওয়া যায় পাথরটি। গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন কমপ্লুতেন্সে ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রিদের প্রাগৈতিহাসিক অধ্যাপক মারিয়া দে আন্দ্রেস হেররো। তার ভাষ্য, পাথরটি দেখে প্রথমে আমরা অবাক হই! মনে হচ্ছিল যেন কারো মুখের অবয়ব।
পাথরটির অবস্থান ছিল গুহার ১ দশমিক ৫ মিটার নিচে। ধারণা করা হচ্ছে, কাছের কোনো এক নদী থেকে তুলে এনে পাথরটি গুহায় রাখা হয়েছিল। এর কার্যকর কোনো ব্যবহার না থাকলেও, এর লালচে দাগ গবেষকদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে।
পরে সেই দাগে আঙুলের ছাপ রয়েছে কি না তা জানতে গবেষকরা দ্বারস্থ হন স্পেনের ফরেনসিক পুলিশের। এ ধরনের পুরনো চিহ্ন শনাক্ত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিজ্ঞতায় নতুন সংযোজন।
আধুনিক মাল্টিস্পেকট্রাল বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে পুলিশের প্রযুক্তি বিভাগ নিশ্চিত করে— ছাপটি মানুষের আঙুলের এবং তা এক প্রাপ্তবয়স্ক নিয়ান্ডারথালের (জার্মানির নিয়ান্ডার উপত্যকায় বসবাসকারী বিলুপ্ত মানব জাতি)।
পরীক্ষায় উঠে আসে, আঙুলের ডগায় লালচে ওকার রঙ লাগানো ছিল, যা দিয়ে পাথরের ওপর চিহ্ন রাখা হয়েছিল। গবেষকদের ধারণা, পাথরের ফাটল ও গড়ন ছিল মুখের মতো। আর সেই লাল দাগটি হয়তো নাকের অবস্থান বোঝাতে দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এটি ছিল মানুষের প্রতীকী মুখ।
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওলিথিক গবেষক পল পেটিট বলেন, এই আবিষ্কার নিয়ান্ডারথালদের চিন্তাশক্তি ও শিল্পবোধের প্রমাণ।
এখন গবেষকদের নতুন লক্ষ্য— এই ধরনের আরো নিদর্শন খুঁজে বের করা, যাতে ভবিষ্যতে ফরেনসিক প্রযুক্তির সাহায্যে আরো অনেক ইতিহাসের জানালা খোলা সম্ভব হয়।