মনজুর এ আজিজ : চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। ঘণ্টায় ২৮০ টন গতিতে সরাসরি ডিজেল আসছে রাজধানীমুখী পথে। এতে কমবে নৌ ও সড়কপথে পরিবহন খরচ, সময় এবং সিস্টেম লস। এতে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হলো বলে আশার কথা জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার (২২ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে ডিজেল পাঠানো শুরু হয়। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেল ৩টা পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ লিটার পরিশোধিত ডিজেল।
বিপিসির জ্বালানি বিপণনকারী তিন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েলের চট্টগ্রাম ডিপো থেকে এই ডিজেল পাঠানো হচ্ছে পাইপলাইনে। শুরুতে পদ্মা ৬৬ লাখ লিটার পাঠায়। পরে সোমবার মেঘনা শুরু করে তাদের বরাদ্দের তেল সরবরাহ। মেঘনা মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ পাঠিয়েছে ৪৬ লাখ লিটার। প্রথম দফায় তাদের লক্ষ্য ৭০ লাখ ৮০ হাজার লিটার। সবশেষে যমুনা অয়েল কোম্পানি তাদের বরাদ্দ তেল পাঠাবে।
বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন্স) মণি লাল দাশ গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ঘণ্টায় ২৮০ মেট্রিক টন তেল পাঠানো হলেও পাইপলাইনের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ঘণ্টায় ৩২০ টন। এখন পর্যন্ত কোনো জটিলতা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে চলেছে ডিজেল পরিবহন।
পদ্মা অয়েলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৬৬ লাখ লিটার ডিজেল পাঠানো হয়। এরপর মেঘনা পেট্রোলিয়াম সোমবার দুপুর থেকে ডিজেল পাম্প করা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ ৪৬ লাখ লিটার ডিজেল সরবরাহ করে। প্রথম দফায় মেঘনা পাঠাবে মোট ৭০ লাখ ৮০ হাজার লিটার।
এদিকে, বিপিসির নবগঠিত প্রতিষ্ঠান পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসিপিএলসি) ও সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ইউনিট এই কার্যক্রমের তদারকি করছে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে অনুমোদন পায়। সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এর কাজ শেষ করা হয়।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ২৭ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্প থেকে বছরে আয় হবে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা, আর খরচ ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকার মতো। এখন পর্যন্ত দেশের জ্বালানি তেলের বার্ষিক গড় চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল এবং ঢাকা বিভাগেই মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ তেল ব্যবহৃত হয়।
জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে পাল্টে যাবে দেশের জ্বালানি পরিবহনের ধারা। এতদিন চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে নারায়ণগঞ্জ, সেখান থেকে ট্রাকে ঢাকায় তেল পৌঁছাতে সময় ও বিপুল অর্থ ব্যয় হতো। এখন সেই জায়গায় দ্রুত, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে ডিজেল পৌঁছে যাবে রাজধানী ও আশপাশের অঞ্চলে। এটি একদিকে যেমন পরিবহন খরচ কমাবে, অন্যদিকে সময় এবং ব্যবস্থাপনাও হবে আরও দক্ষ।