ক্ষুদ্র ও মধ্যম আয়ের ব্যাংক আমানতকারীদের জন্য আবগারি শুল্ক সহজ করতে চলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী অর্থবছরে ব্যাংক জমায় আবগারি শুল্কমুক্ত সীমা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হবে। ফলে নতুন করে ৭৫ লাখ আমানতকারী আবগারি শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ছাড়ের ফলে নিম্ন ও মধ্য-আয়ের মানুষের মোট করের বোঝা কমবে প্রায় ১১২ কোটি টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার নিম্ন ও মধ্য-আয়ের মানুষদের ব্যাংকিং সেবা আরও গতিশীল করতে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা জমাতে উৎসাহী হবেন।
তারা বলেন, বর্তমান অনেক ক্ষুদ্র বা ছোট আমানতকারী অন্য কোথাও টাকা না রেখে ব্যাংকে রাখে। ব্যাংকনির্ভরতা বাড়ানো ও মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব তৈরির অংশ হিসেবে সরকার আগামী অর্থবছরে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
তবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় আমানতকারীদের গচ্ছিত টাকার দিকে নজর দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশে মোট ১৬.৩২ কোটি ব্যাংক আমানতকারী রয়েছে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর বিপরীতে মোট আমানতের পরিমাণ ১৮.৮৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ১৫.৪৭ কোটি—যা মোট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রায় ৯৫ শতাংশ।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, এটি ভালো পদক্ষেপ। এর ফলে ছোট ছোট গ্রাহকদের ব্যাংকে অংশগ্রহণ বাড়বে। নতুন করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মানুষ ছোট চার্জও দিতে চায় না। আমানতকারীরা যখন জানতে পারবে তাদের আমানতের টাকার ওপর আবগারি শুল্ক কাটা হবে না, তখন ব্যাংকের প্রতি তাদের নতুন করে আগ্রহ তৈরি হবে।'
ব্যাংকে কত টাকা থাকলে কী পরিমাণ আবগারি শুল্ক দিতে হবে
নতুন কাঠামো অনুযায়ী, ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত আবগারি শুল্কমুক্ত থাকবে। ৩ লাখ টাকার বেশি থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য শুল্ক হবে ১৫০ টাকা। ৫ লাখ টাকার বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে ৫০০ টাকা।
১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। ১ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ২ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য ২০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।
আবগারি শুল্ক বছরে একবারই নেওয়া হয়। যদি কোনো ক্যালেন্ডার বছরে আমানত একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে, তবে একবারই শুল্ক আরোপ করা হয়। কোনো অ্যাকাউন্টে ১ এক লাখ টাকার কম থাকলে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হয় না।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, অপেক্ষাকৃত কম টাকার অ্যাকাউন্টধারীদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি বেশি টাকার হিসাবধারীদের কাছ থেকে বেশি আবগারি শুল্ক আদায় করতে চায় সরকার।