নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু আয় ২৮২০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন মাইলফলক। মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৩৮ ডলার। সে হিসেবে চলতি বছরে বেড়েছে ৮২ ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৯৩ ডলার।
মাথাপিছু আয়ের এই হিসাব ব্যক্তি বিশেষের একক আয়ের প্রতিফলন নয়। এটি দেশের মোট জাতীয় আয়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও প্রবাসী আয়সহ সেটিকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে নির্ধারিত একটি গড় হিসাব।
চলতি অর্থবছরে প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২০ টাকা ২৯ পয়সা, যা আগের বছরের ১১১ টাকা ৬ পয়সার তুলনায় অনেক বেশি। ফলে টাকার অঙ্কে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২১ টাকা, যেখানে আগের বছরে তা ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ১০২ টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার ইঙ্গিত দিলেও, বাস্তব জীবনে এর প্রভাব সবার মধ্যে সমানভাবে পড়ছে না। আয় বৈষম্য এবং মূল্যস্ফীতির চাপে সমাজের একাংশ এখনও চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, টার্গেটেড ক্যাশ ট্রান্সফার, খাদ্য সহায়তা, নগদ ভর্তুকি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ‘আয়ের সমতা আনতে বিশেষ তহবিল’ গঠনের বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এখন আলোচনা চলছে কোন শ্রেণি বা পেশাজীবীদের জন্য কী ধরনের সহায়তা সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে। আগামী বাজেটে এসব পরিকল্পনার প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, মাথাপিছু আয় বাড়ার এই ধারা অর্থনীতির একটি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরে। তবে এই অগ্রগতিকে টেকসই করতে হলে দরকার আয় ও সম্পদের ভারসাম্য রক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফল সবার ঘরে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।