শিরোনাম
◈ আ. লীগের নিবন্ধন বাতিল ইস্যুতে বৈঠক শেষে যা বলছে ইসি (ভিডিও) ◈ প্রবাসী আয়ে সর্বকালের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ! ◈ জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকাণ্ডের দায় শেখ হাসিনার: চিফ প্রসিকিউটর ◈ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা : প্রধান উপদেষ্টা ◈ চোখ বেঁধে গুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা ◈ টেস্ট থেকে অবসরে কোহলি ◈ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ ৫ অভিযোগ ◈ নেতাকর্মীদের জন্য জামায়াত আমিরের জরুরি বার্তা ◈ ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, ৪ বছরে উন্নয়নে বরাদ্দ সর্বনিম্ন ◈ গাজীপুরে হত্যা মামলার আসামিদের তালাবদ্ধ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুড়ে ছাই তিন বসতঘর

প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২৫, ০৮:২৩ রাত
আপডেট : ১২ মে, ২০২৫, ০৪:১৫ দুপুর

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

লোকসানে ধুঁকছে পুঁজিবাজার, বন্ধ ৩০ হাজার অ্যাকাউন্ট, নিষ্ক্রিয় ৫৭ হাজার বিনিয়োগকারী!

মনজুর এ আজিজ : দেশের পুঁজিবাজারকে কোনোভাবেই এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছেনা। বরং ক্রমাগত লোকসানে ধুঁকছে এক সময়ে ডাপুটে থাকা পুঁজিবাজার। লোকসানের কারণে গত ৯ মাসে ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী সব শেয়ার বিক্রি করে কেনাবেচার অ্যাকাউন্ট (বিও) বন্ধ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন অন্তত ৫৭ হাজার বিনিয়োগকারী। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে বর্তমান সময়ে অর্থনীতির সামগ্রিক সংকটের সঙ্গে পুঁজিবাজারের এই সংকট উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, গত ৯ মাসে ১৭৯ কর্মদিবসের মধ্যে ১০৫ দিনই দর পতন হয়েছে। এই সময়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৩৩৬টির। তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৭টিই দর হারিয়েছে। দর হারানো শেয়ারগুলোর গড় পতন ২৬ শতাংশ। ১১ আগস্ট ২০২৪ এরপর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ দর হারিয়েছে ২৬১ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। ঘন ঘন দর পতনে লেনদেনের পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠকে শেয়ার মার্কেট সংস্কারে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদল আনার নির্দেশ দিয়েছেন। 

অংশীজনরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রথমত নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা খুবই অনাকাক্সিক্ষত। মতের অমিল থাকতে পারে, তাই বলে আলোচনা না হওয়া কক্সিক্ষত নয়। তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজার একটা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু

ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা থেকে বের হতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে চেষ্টা করেছে, বিএসইসির ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না।
কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, কমিশনের কাছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল অতীতে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না, এমন ভরসা তৈরি করা। অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের ঘটনায় জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা।

অথচ ১৯ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যে ১৫ বছরে সংঘটিত অসংখ্য ঘটনা থেকে মাত্র ১২টি বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারী দুই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্ণধারসহ পাঁচজনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মাকসুদ কমিশন। তদন্ত কমিটি গঠনের পরদিন রাশেদ মাকসুদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবেন। অতীতের বাকি অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে সেগুলো তদন্ত করতে প্রয়োজনে আরও তদন্ত কমিটি করবেন। এমন ঘোষণার সাড়ে আট মাস পরও কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাস্কফোর্সের এক সদস্য জানান, কমিটির পাঁচ সদস্যের সবাই বড় পদে পূর্ণকালীন চাকরি করেন। তাদের পক্ষে এই বিশাল কাজ করার সময় নেই। এছাড়া প্রয়োজনীয় দক্ষতাও অনেক ক্ষেত্রে নেই।

এদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) পদের মতো তিন শীর্ষ নির্বাহী পদ শূন্য অবস্থায় চলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। মাকসুদ কমিশন শূন্য পদ পূরণে স্টক এক্সচেঞ্জকে কোনো চাপই দেয়নি। দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেন মাকসুদ কমিশন। ফলে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ডিএসইর ব্রোকারদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় কমিশনের, যা এখন আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ঘোষণা করেছেন, আগামী বাজেটে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ এবং মূলধনী মুনাফার ওপর অর্জিত আয়ে কর ছাড় দেওয়া হবে। তাছাড়া ভালো সরকারি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারমুখী করতে আকর্ষণীয় হারে কর ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এমন ঘোষণার পরও শেয়ারবাজারের দরপতন থামেনি। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব বিষয়ে তাদের অস্বস্তি আছে, সেগুলো আপাতত দূরে রাখা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে এ বাজার পরিচালনা করা যাবে না।

এদিকে শেয়ার মার্কেটের বেহাল দশা থেকে উত্তরণে রোববার (১১ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি শেয়ার মার্কেট সংস্কারে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনার নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে এসব কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শেয়ার মার্কেট সংশ্লিষ্টদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদেশি যেসব কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার আছে যেমন- ইউনিলিভার, তাদের যাতে খুব দ্রুত শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে যাদের বার্ষিক টার্নওভার ২-৩ বিলিয়ন ডলার, তাদের অনেক বড় বড় ভেঞ্চার আছে, তাদের যাতে স্টক মার্কেটে আনা যায়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেজন্য কী ধরনের প্রণোদনা দেওয়া যায়, সেটি শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের মতো কোম্পানিকে কীভাবে শেয়ার বাজারে আনা যায়, সেটার কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন,  শেয়ার মার্কেটে স্বার্থান্বেষী লোক অনেক আছে। আমরা সংস্কার কাজে হাত দিলেও অনেক সময় কাজ করতে চায় না বা এরা এই সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এজন্য শেয়ার বাজারে খুব গভীরভাবে সংস্কার করা যায়, সেজন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তারা এসে পুরো তিন মাসে এই সংস্কার বাস্তবায়ন করবেন।

প্রেস সচিব বলেন, আমাদের স্টক মার্কেট সংশ্লিষ্ট যেসব এজেন্সি আছে বা অফিস আছে, এখানে অনেক ধরনের দুর্নীতি আছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। যাতে শেয়ার বাজারে একটা বার্তা পৌছায় যে কোনও ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে। বাংলাদেশে যত বড় বড় কোম্পানি আছে তারা ব্যংকগুলো থেকে ঋণ নেয়, এটাকে নিরুৎসাহিত করে ঋণ না নিয়ে কীভাবে বন্ড ইস্যু করে স্টক মার্কেটের মাধ্যমে তারা তাদের অর্থায়ন সংগ্রহ করতে পারে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়