শিরোনাম
◈ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল হবে না ভারতে! সমস্যার কারণ পাকিস্তান ◈ বিদেশের মাটিতে পাকিস্তানের কাছে হারলো ভারত! ◈ অ‌স্ট্রেলিয়ান শন টেইট বাংলা‌দেশ দ‌লের নতুন পেস বোলিং কোচ ◈ পুলিশের হাতে ‘মারণাস্ত্র’ থাকবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ হাসিনাপুত্র জয় নাগরিকত্ব নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের, নিয়েছেন শপথ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার দায়ে : প্রেস সচিব  ◈ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন ◈ আমরা আঞ্চলিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও অভিন্ন সমৃদ্ধিতে বিশ্বাস করি: প্রধান উপদেষ্টা  ◈ ড. ইউনূসের কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই: প্রেস সচিব ◈ ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাহারি ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ যাত্রী ও পথচারীরা

প্রকাশিত : ১২ মে, ২০২৫, ০৪:১০ দুপুর
আপডেট : ১২ মে, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দিনাজপুর বন বিভাগের ৫হাজার একর জমি বেদখল

রুকুনুজ্জামান পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের পার্বতীপুর মধ্যপাড়া রেঞ্জ বন বিভাগের ৫ হাজার একর জমি স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা দখলে। বনভূমির জায়গায় জবরদখলকারীরা রিসোর্ট-কটেজ, হাটবাজার, ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও বাগান তৈরি করে, জমি দখলের মহোৎসব চলছে। কোনোভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছে না বন বিভাগের জমি। দখলদারদের দাপটের কাছে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহায় ও জনবলের সংকট।

জানা যায়, বন বিভাগের নবাবগঞ্জ কুশদহ বিটে ১২০০ একর জমি দখল করে গড়ে উঠেছে চাপাইপাড়া, হঠাৎপাড়া, কুষ্টিয়াপাড়া ও হামিদপুর গ্রাম। এরমধ্যে গত ৭ আগস্ট আরও ৮ একর জমি দখল হয়েছে। অবশিষ্ট আছে মাত্র ৪০ একর জমি। মধ্যপাড়া রেঞ্জের ৬ হাজার ৮০০ একর জমির মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৫ হাজার একর ভূমি বেদখলে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

বন বিভাগের মধ্যপাড়া রেঞ্জের কর্মকর্তা আল আমিন হক জানান, বনের ভেতরেই গড়ে উঠেছে একাধিক বনখেকো স’মিল। পার্বতীপুর উপজেলায় স’মিল রয়েছে ৭৪টি। তার মধ্যে ৬০টিই অবৈধ। এসব অবৈধ স’মিল মালিকদের নামে ২৬টি মামলা হওয়ার পরেও তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার একই কাজ করছেন। তারপরও প্রতি মাসে একটা করে ফৌজদারি মামলা হচ্ছে। বিধি-সংরক্ষণ বন বিভাগ থেকে ৫ কিমির মধ্যে কোনো স’মিল স্থাপন করতে পারবে না। শহরে স্কুল-কলেজ ও বাসাবাড়ি থেকে ২০০ কিমি দূরত্বে স’মিল করতে পারবে না।

পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া রেঞ্জ সূত্রে বলা হয়েছে, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বন বিভাগ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মধ্যপাড়া রেঞ্জ। এ রেঞ্জের অধীনে রয়েছে মধ্যপাড়া সদর, নবাবগঞ্জ কুশদহ বিট, আফতাবগঞ্জ বিট, ভবানীপুর বিট ও পার্বতীপুর উপজেলা নার্সারি। আফতাবগঞ্জ বিটে ২৬০০ একর, মধ্যপাড়া বিটে ১৪০০ একর, নবাবগঞ্জ কুশদহ বিটে ১২০০ একর ও ভবানীপুর বিটে ১৬০০ একর বনভূমি রয়েছে। মধ্যপাড়া রেঞ্জে মোট ৬ হাজার ৮০০ একর বনভূমি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে বনভূমি আছে মাত্র ১ হাজার ৮০০ একর। আর বাকি ৫ হাজার একর বনভূমি বেদখলে চলে গেছে। এভাবে মধ্যপাড়া বন বিভাগের জমি দখলের পর বিক্রিও করে দিচ্ছেন কেউ কেউ। কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার গাছ। রাতের আঁধারে গাছ কেটে নিয়ে ধীরে ধীরে তা কৃষিজমিতে রূপান্তর করে চাষাবাদ শুরু করেছে দখলকারীরা।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৫ সালে পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া রেঞ্জের অধীন নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ বন বিট সংলগ্ন বিনোদন পার্ক ‘স্বপ্নপুরী’ মালিক বন বিভাগের ৩৭ একর জায়গার দখল নিতে সেখানকার ১০৪ শালগাছ কেটে ফেলে দেন। এ ঘটনায় স্বপ্নপুরীর জেনারেল ম্যানেজার মিজানুর রহমান মিজানসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে বন বিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই জমি তাদের। বন বিভাগ কবে নিয়েছে, তা তাদের জানায়নি। আমাদের হাতে জমির রেকর্ড, খাজনা-খারিজসহ যাবতীয় প্রমাণাদি রয়েছে।’

বন বিভাগের জমি দখলের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া রেঞ্জের কর্মকর্তা আল আমিন হক আরও বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আসার আগে বন বিভাগের জায়গাগুলো দখল হয়ে গেছে। আমি আসার চার মাসে একাধিক নোটিস দেওয়ার পরেও তারা দখল ছাড়েনি। এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দেওয়া হয়েছে। পার্বতীপুরের হরিরামপুর মৌজার ১৩২ একর জমির মধ্যে টিকে আছে মাত্র ২ একর। সেসব জমিরও অর্ধেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তবে জবরদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধারে মাঠে সরব রয়েছে বন বিভাগ। চলমান রয়েছে ৬০০টি মামলা। গত ৪ মাসে ৩০ একর জায়গা দখলমুক্ত করেছে বন বিভাগ।’ চলতি অর্থবছর আরও জমি উদ্ধার করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বন বিভাগের জমি থেকে ৮ দোকান উচ্ছেদ : এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে মধ্যপাড়া বাজার এলাকায় বন বিভাগের জয়গা দখল করে স্থাপন করা ৮টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন। এ সময় দিনাজপুর বন সংরক্ষক সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা তানভিরুল ইসলাম নাহিদ ও নুরন্নাহার উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা করেন মধ্যপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ। এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগের জমি থেকে ১৫ লাখ টাকা মূল্যের আকাশমণি ও শালগাছের ৪০০ টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে। চোরাই গাছ রাত সাড়ে ৮টার দিকে উদ্ধার করতে গিয়ে বনপ্রহরী আতিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, জনি, সহযোগী ওয়াচার মাজেদুল হক, আজিজুল হক গুরুতর আহত হন। গত চার মাসে প্রায় কোটি টাকা সম্পত্তি উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।

মোঃ রুকুনুজ্জামান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়