মনিরুল ইসলাম : পুঁজিবাজারে কার্যকর সংস্কার আনতে সরকার একটি বিদেশি বিশেষজ্ঞ দলের সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যাদের কোনো স্বার্থ নেই, এমন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এই দল গঠন করা হবে। তারা আগামী তিন মাসের মধ্যে সংস্কারের জন্য বাস্তবমুখী সুপারিশ পেশ করবে।
আজ রোববার (১১ মে) প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।
বৈঠকের শুরুতে বিএসইসি চেয়ারম্যান মাকসুদ গত নয় মাসে পুঁজিবাজারে গৃহীত সংস্কার ও অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
এই আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজারকে পুনর্জীবিত ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে পাঁচটি প্রধান নির্দেশনা দেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "পুঁজিবাজারে বহু ভেস্টেড ইন্টারেস্ট (স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী) রয়েছে। ফলে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর হয় না, কারণ এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এই বাধা দূর করতে পুঁজিবাজারে নিরপেক্ষ বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি দল গঠন করা হবে, যারা বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করে বাজারকে কীভাবে আধুনিক করা যায়, সে বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট দেবে।"
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে—সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানি এবং যেসব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে সরকারের শেয়ার রয়েছে, সেগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, "ইউনিলিভারে সরকারের শেয়ার রয়েছে। এ শেয়ারগুলো বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এছাড়াও, দেশের যেসব বড় বড় বেসরকারি কোম্পানি রয়েছে, যাদের বার্ষিক টার্নওভার ২-৩ বিলিয়ন ডলার, তাদের পুঁজিবাজারে আনতে কী ধরণের প্রণোদনা দেওয়া যায় তা খুঁজে দেখতে বিএসইসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপের মতো বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ভেঞ্চার রয়েছে, যেগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
শফিকুল আলম আরও বলেন, পুঁজিবাজারে কর্মরত অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব দুর্নীতিবাজ ও অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট লোনের মাধ্যমে যে বিশাল অঙ্কের ঋণ নেয়, তা নিরুৎসাহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঋণের পরিবর্তে শেয়ার বা বন্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে উৎসাহ দিতে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারের পাঁচ নির্দেশনা:
>> সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ;
>> বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রনোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ;
>> স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার করা;
>> পুঁজিবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং
>> বড় ধরনের ঋণ প্রয়োজন এমন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ঋণ-নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ। উৎস: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।