তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ২৬.৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া ডলারের হিসাবে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় হলেও প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে হয়েছে বাংলাদেশ। চীনের এ হার ৪ শতাংশ। ভিয়েতনামের ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। অর্থাৎ সারাবিশ্ব থেকে যে হারে আমদানি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ থেকে বেড়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি।
গত বছরের একইসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেখানে ১ হাজার ৭৫৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, সেখানে চলতি বছরের একইসময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৩ মিলিয়ন ডলারে। একইসময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিও বেড়েছে ১০.৯৫ শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি এই পরিসংখ্যান মার্চ পর্যন্ত। এপ্রিলের শুরুতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর ২রা এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ই এপ্রিল তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও চীনা পণ্যে মার্কিন শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ। বেইজিং দফায় দফায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ শতাংশে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ওটেক্সার তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করেছে ২০ হাজার মিলিয়ন ডলারের। গত বছর একইসময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৯ মিলিয়ন ডলার।
তথ্যমতে, বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। চীনের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪.১৮ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৩.৯৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার বেড়েছে ২০ শতাংশ, ভারতের ২৪ শতাংশ, মেক্সিকোর ২ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১৪.৬৯ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৭.৪৯ শতাংশ ও কোরিয়ার ২.১৭ শতাংশ। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুধু হন্ডুরাসের পোশাক রপ্তানি ১০.১১ শতাংশ কমেছে।
এই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। দেশটি ৩ হাজার ৮৭৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন ৩ হাজার ৫৯৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
রপ্তানিকারকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক গত এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। ৩৭ শতাংশ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রয়েছে। ৯০ দিন পর কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। উৎস: মানবজমিন।