মহসিন কবির: দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বিনেয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিনেয়োগকারীরারা আশা করছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, কিন্তু হলো উল্টে চিত্র। দরপতনে নিঃস্ব হয়েছে বিনোকারীরা।
অবশেষে কাফন মিছিল করতে বাধ্য হয়েছে। বিনেয়োগকারীরা বলেছেন শেয়ারবাজার একে এক শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই। যাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তিনি করাপশনে ঢুকে যাচ্ছেন। চক্র থেকে বের হতে পারছেন না। এখন কি হবে বিনিয়োগকারীদের। এমন প্রশ্ন নিয়ে মাথায় হাত বিনোয়াগকারীদের।
৭ মে ব্যাপক দর পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৯৩ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৮১টিই দর হারিয়েছে। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ হারিয়ে ৪৮০২ পয়েন্টে নেমেছে। হার বিবেচনায় পতন ২০১৩ সালের ২৩ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতেও দর পতন হয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউস প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, বুধবারের লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বাইরে অন্য কোনো নেতিবাচক খবর ছিল না। তাই সবাই এটিকে দর পতনের কারণ বলে মনে করছেন। এর বাইরে অন্য কোনো ব্যাখ্যাও নেই।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেছেন, এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে পড়েছিল। তবে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থার প্রভাব ওই যুদ্ধের মতো নয়। তাঁর মতে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা রয়েছে, যা বড় আকারে প্রতিফলিত হয়েছে।
ধারাবাহিক দরপতনের প্রতিবাদে হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ৮ মে রাজধানীর মতিঝিলে অভিনব এক 'কাফন মিছিল'-এ অংশ নেন। বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে শেয়ারবাজারে দিনের লেনদেন শেষে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সাদা কাফনের কাপড়ে নিজেকে মুড়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন।
তাদের অভিযোগ, শেয়ারবাজার এখন ধ্বংসের মুখে, আর এর জন্য পুরোপুরি দায়ী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যান অজ্ঞ, অযোগ্য এবং শেয়ারবাজার পরিচালনার সম্পূর্ণ অযোগ্য। তার ভুল সিদ্ধান্ত ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। তারা অবিলম্বে তার অপসারণের দাবি জানান।
বিনিয়োগকারীরা আরও জানান, আগামী ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় শেয়ারবাজার বিষয়ক বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেন, "আমাদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।"
তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। এবারও যদি দাবি না মানা হয়, তবে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।"
এর আগের দিন (৭ মে) বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস ইউনিটি কাউন্সিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে একই দাবিতে।
সেখানে বক্তারা বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে ডিএসই ইনডেক্স ১ হাজার ১০০ পয়েন্টের বেশি কমেছে, আর দৈনিক লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০–৪০০ কোটি টাকার মধ্যে।
গত আট মাসে বাজার মূলধন থেকে ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি উধাও হয়ে গেছে, ফলে অসংখ্য বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছেন বলে জানান তারা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অথচ শেয়ারবাজার নিয়ে তার কোনও বাস্তব অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা নেই।
প্রতিবাদকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের অপসারণ, গত ১৫ বছরে বিতর্কিত আইপিও ইস্যুকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, বাজার স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানান।