শিরোনাম
◈ যুদ্ধ বাঁধলে কী করবেন নাগরিকরা, বুধবার ভারতজুড়ে মহড়া ◈ তরুণদের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি ◈ শতাধিক কারখানা বন্ধ, বিপাকে ৬০ হাজার শ্রমিক ◈ ডেনিম এক্সপোর ১৮তম আসর শুরু সোমবার ◈ টেকসই উন্নয়নে সকল খাতে ন্যায্য রূপান্তরের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার ◈ এডিবির কাছে যে চার খাতে সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা ◈ পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে জ্বালানি তেল, সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা ◈ ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ শা‌মি‌কে প্রাণনাশের হুমকি ◈ ব্রা‌জিল আগামী সপ্তাহে নতুন কোচের নাম ঘোষণা করবে 

প্রকাশিত : ০৬ মে, ২০২৫, ০৭:৫০ বিকাল
আপডেট : ০৬ মে, ২০২৫, ১১:২২ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

শতাধিক কারখানা বন্ধ, বিপাকে ৬০ হাজার শ্রমিক

মনজুর এ আজিজ : রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রায় শতাধিক কারখানা স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে কাজ হারিয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি শ্রমিক। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক অর্ডার কমে যাওয়া, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অর্থ পরিশোধে বিলম্ব এবং গ্যাস-বিদ্যুত্যের দাম বৃদ্ধি ও নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ না পাওয়ায় অনেক মালিক কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। 

শিল্প পুলিশকে উদ্ধৃত করে একটি জাতীয় দৈনিক জানায়, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী শিল্পাঞ্চলে ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে গাজীপুরে রয়েছে ৫৪টি, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদীতে ২৩টি ও সাভার-আশুলিয়ায় ১৮টি। এসব কারখানায় ৬১ হাজার ৮৮১ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় প্রায় ২ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে ২৩ প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এসব শিল্পকারখানার প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের জীবন এখন দুর্বিষহ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প পুলিশ-৪-এর এক কর্মকর্তা জানান, গত সাত মাসে গ্রীন বাংলা হোম টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান ফ্যালকন গার্মেন্টস, জিএল ফ্যাশন, মাস্টার টেক্সটাইল, ওয়েস্ট বেস্ট অ্যাটায়ার্স, স্টার কাটিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ২১টি কারখানা বন্ধ হয়। সব কারখানাই ছোট ও মাঝারি। এছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী গ্রুপের দুই কারখানার কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত কারাখানা দু’টিতে কাজ করতেন ৪ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত কারখানা ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানা।

গত আগস্টের পর জেলার ৫৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হওয়া কারখানার প্রায় সবকটিই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের।
গাজীপুরে বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিএমএস অ্যাপারেলস, নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিন্স, হার্ডি টু এক্সেল, পলিকন লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস, মাহমুদ জিন্স অ্যাপারেলস, টিআরজেড ও দি ডেল্টা নিট। গাজীপুরে বন্ধ হওয়া ৫৪ কারখানার ৪৫ হাজার ৭৩২ শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে বেক্সিমকোর ৩৩ হাজার ২৪৪ জন শ্রমিক রয়েছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের সারাবো ও কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়।

অন্যদিকে ঢাকার নিকটবর্তী সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে শিল্পকারখানা রয়েছে ১ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ৭৪৫টি। গত সাত মাসে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ১৮টি তৈরি পোশাক কারখানা। এতে বেকার হয়েছেন ১০ হাজার ১২৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী। 

শিল্প পুলিশ-১-এর কর্মকর্তারা জানান, গত সাত মাসে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, বেস্ট ওয়ান সোয়েটার, এমএস সোয়েটার, সাভার স্পোর্টসওয়্যার, বার্ডা গ্রুপ, র‌্যামস ফ্যাশন অ্যান্ড এমব্রয়ডারি, প্রিয়াঙ্কা ফ্যাশন, জাভান টেক্স নিটওয়্যার ইত্যাদি কারখানা বন্ধ হয়। তবে নতুন করে কিছু কারখানা চালুও হয়েছে। 

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে তাদের নতুন কারখানা চালু হয়েছে ১২৮টি। তবে এই পনেরো মাসে আবার ১১৩টি কারখানা বন্ধও হয়ে গেছে। এতে কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার ১০৪ শ্রমিক। আর কর্মসংস্থানের যোগ-বিয়োগের পর বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার। আর ১১৩টির মধ্যে ৬৯টি (৬১ শতাংশ) বন্ধ হয়েছে গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে।

সম্প্রতি বন্ধ হওয়া তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি, কেয়া গ্রুপের ৪টি, টিএনজেডের ৪টি প্রতিষ্ঠান এবং ভারগো এমএইচ, মডিশ অ্যাটায়ার, সিরোক অ্যাপারেলস, ওডিশ ক্র্যাফট ইত্যাদি। অন্যদিকে গত ১৫ মাসে বিজিএমইএর সদস্যপদ নেয়া নতুন কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো একেএইচ আউটওয়্যার, এজেড কম্পোজিট, নেক্সটন, এলএসএ অ্যাপারেলস, সিটেক ফ্যাশন, সুপ্রিম আউটফিট, স্প্যারো গ্রিনটেক ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, কারখানা বন্ধের কারণে এক লাখের বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এখনও বেকার। অবশিষ্ট শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এবার রাজনৈতিক পরিবর্তনও একটি ভূমিকা পালন করেছে। বেশ কয়েকটি বড় গ্রুপ-যেমন বেক্সিমকো এবং নাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নতুন চালু হওয়া কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলোর চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে আশার কথা জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়