শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন ◈ ডাকসুতে শিবিরের জয়—প্রচারণা, কৌশল নাকি জনপ্রিয়তা? ◈ জুলাই সনদ না মানলে প্রার্থিতা বাতিল- প্রস্তাব জামায়াতের ◈ ভয়াবহ সমুদ্রযাত্রা: ইতালির লাম্পেদুসায় পৌঁছেছে বাংলাদেশিসহ ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ◈ কাতারে ইসরায়েলি হামলা: পরাশক্তির মিত্র হয়েও বন্ধুহীন দোহা? ◈ মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকেই অস্বীকার করা : জামায়াত নেতা আযাদ ◈ মা-বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফরিদা পারভীন ◈ রিজার্ভ বেড়ে ৩০. ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ◈ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ সনাতন ধর্মাবলম্বী যোগ দিলেন জামায়াতে ◈ কাঠগড়ায় যে কারনে ছাগলকাণ্ডের মতিউরকে ধমক দিলেন তাঁর স্ত্রীর

প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:৫৩ রাত
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:২৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মা-বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফরিদা পারভীন

কুষ্টিয়া মা-বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন লোক সংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানে মা-বাবার কবরে তাকে দাফন করা হয়েছে। 

এর আগে রাত ৮টা ২৩ মিনিটে ফরিদা পারভীনের মরদেহ কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানে পৌঁছায়। এরপর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। তার লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্স গোরস্তানের সামনে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদার ভক্ত, সংগীত শিল্পী, পরিবার, স্বজন ও স্থানীয়দের শোকে ওই এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তার মরদেহ দেখতে বিভিন্ন এলাকার থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসে। 

লালন সম্রাজ্ঞী খ্যাত ফরিদা পারভীন গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্বামী এবং চার সন্তান রেখে গেছেন।

ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর খবরে শিল্পী, কলাকুশলীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিল্পীর মরদেহ সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে শিল্পীর মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে জানাজা শেষে মরদেহ কুষ্টিয়াতে নিয়ে আসা হয়। 

ফরিদা পারভীন বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। চলতি বছরে তিন দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। গত ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফরিদা পারভীনকে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার পরই নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

লালনের গানের বাণী ও সুরকে দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুরুতে নজরুল সংগীত ও আধুনিক গান দিয়ে ফরিদা পারভীনের যাত্রা শুরু হয়। তবে তার সংগীত জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। বাংলাদেশের লালন সংগীতের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে।

স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ার দোলপূর্ণিমার মহাসমাবেশে প্রথমবারের মতো লালনের গান পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন। শুরুতে অনীহা থাকলেও বাবার উৎসাহে মকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনের গান শেখা শুরু করেন। এরপর খোদা বক্স সাঁই, করিম সাঁই, ব্রজেন দাসসহ গুরু পরম্পরার সাধকদের কাছে তালিম নিয়ে লালনের গানকে তিনি কণ্ঠে ধারণ করেন। এরপর লালনের গান ফরিদা পারভীন দেশ-বিদেশে বা বিশ্বমঞ্চে ছড়িয়ে দিয়েছেন। জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে তার কণ্ঠে বেজেছে লালনের দর্শন।

বাবার চাকরির সুবাদে দীর্ঘদিন কুষ্টিয়া শহরে ছিলেন ফরিদা। কুষ্টিয়ার মীর মশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে স্নাতক। ওই শহরেই দীর্ঘদিন তিনি চর্চা করেছেন লালনগীতির।

কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন ১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে ১৪ বছর বয়সে তার পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। এরপর গানে গানে তিনি কাটিয়েছেন ৫৫ বছর।

সংগীতে অবদানের জন্য ফরিদা পারভীন ১৯৮৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। অন্ধ প্রেম চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী সংগীত শিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৮ সালে তিনি ফুকুওয়াকা এশীয় সাংস্কৃতিক পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস ও অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার পেয়েছেন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়