শিরোনাম
◈ টাঙ্গাইলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জিপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিল বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ◈ নোয়াখালীতে প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষিকার আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস ◈ কুমিল্লায় শিশুশ্রমের তদন্তে গিয়ে শ্রম পরিদর্শক অবরুদ্ধ, ফ্রি খাবারের অভিযোগে দ্বন্দ্ব ◈ ফরিদপুরে হাসপাতালের জলাবদ্ধতা নিরসনে সড়কে মাছ ছেড়ে প্রতিবাদ ◈ দীর্ঘ ২২ বছর পর হোসেনপুরে বিএনপির সম্মেলন, হট্টগোলের কারণে কমিটি স্থগিত ◈ টপ এন্ড টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি ক্রিকে‌টে নর্দান টেরিটোরিকে হারা‌লো বাংলাদেশ এ' দল ◈ মহারাজের স্পিনে বেসামাল অস্ট্রেলিয়া, দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকার কা‌ছে ম‌্যাচ হার‌লো ৯৮ রানে  ◈ বিএনপি কর্মীকে হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনাসহ ৯৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা ◈ জুলাই শহিদ পরিবারের করা পদত্যাগ দাবি নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল ◈ বড় সাইবার হামলার শঙ্কা নির্বাচনের আগে!

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:২০ বিকাল
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র: সব ধরণের সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা

এ এইচ সবুজ, গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বিভিন্ন পদে কর্মরত থাকার কথা সাতজন ব্যক্তি। অথচ বর্তমানে সেখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন পিওন। যার নাম বিশ্বনাথ। পিওন বিশ্বনাথের অফিস সময়ে প্রতিদিনের কাজ হলো 'এখানে কোনো চিকিৎসা ও ঔষুধ দেওয়া হয় না' আগত রোগিদের এ তথ্যটুকু জানানো।

কিন্তু সব সময় তাকেও (বিশ্বনাথ) এ হাসপাতালে কিংবা আশেপাশে পাওয়া যায় না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে ফিরে যান। 

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা, একজন পিওন, একজন আয়া ও একজন নৈশ প্রহরী কর্মরত থাকার কথা। 

এখানে আগত রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকার জন্য আবাসন ব্যবস্থাও রয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের মতো দুর্গাপুর ইউনিয়নেও রয়েছে একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। 

এ ইউনিয়নের সবচেয়ে ব্যস্ততম স্থান রাণীগঞ্জ বাজারের উত্তর-পশ্চিম কোনায় রাণীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথেই প্রায় ৮৬ শতাংশ জমির উপর এ হাসপাতালটির অবস্থান। 

এ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও নিকটতম বাসিন্দা মাহবুব আলম জালাল জানান, বছর খানেক আগে পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২৯ প্রকারের ঔষুধ দিয়ে প্রতিদিন আশপাশের দশ-বারোটি গ্রামের প্রায় দেড়শত-দুইশত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হতো এবং মাসে ৩৫-৪০ জন প্রসূতি মায়ের স্বাভাবিক প্রসব কাজ সম্পন করা হতো। এই এলাকার অসহায় দরিদ্র রোগিদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল এ হাসপাতালটি। দুটি আবাসিক কোয়াটার ডাক্তার ও পরিদর্শিকা বসবাস করায় ২৪ ঘন্টাই রোগিরা জরুরি সেবা পেতেন। 

কিন্তু সম্প্রতি হাসপাতালটির দুরবস্থার কারণে প্রায় বছরখানেক ধরে এখানে পোস্টিং হলে কেউ থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে নৈশপ্রহরী না থাকায় এখানকার গভীর নলকূপ (সাবমারসিবল) পাম্প, সৌর বিদ্যুতের প্যানেল, আবাসিক ভবনের দরজা জানালাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। তাছাড়া গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল এ হাসপাতালের প্রায় সাত কাঠা জমি দখল করে নিয়েছে এবং তাদের বাঁধার কারণে পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজটিও সম্পন করা যায়নি। 

যার ফলে নেশাগ্রস্ত যুবকরা অবাধে এখানে আসা যাওয়া করে এবং তাদের নেশার আসর জমায়। রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে বর্তমানে হাসপাতালটির ভেতরে এখন এক ধরনের ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে।

এ হাসপাতালের নিকটতম বাসিন্দা ধনঞ্জয় মন্ডল জানান, প্রতিদিন এখানে প্রচুর সংখ্যক রোগী এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। অনেকেই রিকশা ভাড়া করে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। অযথাই তারা এ টাকা খরচ করছেন জানিয়ে পিওনের সাথে ঝগড়া করে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন।

রাণীগঞ্জ বাজারের মুদি দোকানি মো: আব্দুল হাই জানান, দুর্গাপুর ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম ও আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ যে কোন অসুখ হলেই এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ছুটে আসতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এখানে ডাক্তারসহ অন্যান্য লোকজন না থাকায় এ মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়ছেন। তাই দ্রুততম সময়ে এর একটি সমাধান চান তিনি। তাছাড়া সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই এ হাসপাতালটির সামনের রাস্তায় ও ভেতরের আঙ্গিনায় হাটু সমান পানি জমে থাকে। এ সময় কাদাপানি মারিয়ে রোগিদের যাতায়াত মারাত্মক কষ্ট হয়। সংশ্লিষ্ট মহলের মাধ্যমে এরও একটি স্থায়ী সমাধান চান তিনি।

উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা রহিমা খাতুন জানান, দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা না করা হলেও অবকাঠামোগত অবস্থা এতটাই নাজুক যে, এখানে বসে কেউ অফিস করতে চান না। এখানে কর্মরত বিভিন্ন পদের লোকজন চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত 'তারাগঞ্জ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে' সভা ও অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন। আর বর্তমানে ওষুধের সরবরাহ না থাকায় দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আগত রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখানে স্বাভাবিক কার্যক্রম ও রোগীদের মানসম্পন সেবা নিশ্চিত করতে হলে খুব দ্রুত একটি অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করতে হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়