হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সদরপুরে হঠাৎ করে আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবার। নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে এখন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। সপ্তাহজুড়ে আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মা নদীর ভাঙনে ঢেউখালী ও আকোটেরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। চরমভাবে হুমকিতে রয়েছে নদীর তীরবর্তী রাস্তাগুলো।
জানা যায়, সম্প্রতি আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মা নদীতে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়ে বাড়িতে প্রবেশ করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে বিষধর সাপের উৎপাত। ফসলি জমি ও নিম্নাঞ্চলে থাকা গ্রামগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় এখন আশ্রয় নিতে বসতঘরে উঠছে বিষধর সাপ। বাড়ির উঠানে পানি আসায় শিশুদের পানিতে পড়া নিয়েও দুশ্চিতায় পরিবারের লোকজন।
সদরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মা নদী বেষ্টিত। ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে চরনাছিরপুর, দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া, চরমানাইর ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামে পানি ঢুকে অন্তত এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন চরবাসী।
পানির নিচে তলিয়ে গেছে আউশ ধান। পদ্মার চরের নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি ও চলাচলের রাস্তা প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে। দেখা দিয়েছে নৌযানের সংকট। বসবাসের ঘরবাড়ি এখনও পুরোপুরি প্লাবিত না হলেও বন্যার আশঙ্কায় দিনরাত নির্ঘুম রাত পার করছেন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। অন্যদিকে ঢেউখালী ও আকোটেরচর ইউনিয়নের নদীপাড়ের কয়েকটি গ্রামের বহু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলার চরনাছিরপুর ইউয়িনের খলিফাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. চুন্নু মোল্যা বলেন, হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়েছে। গত ৫ বছর আগে এমন হয়েছিল। গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা ছাড়া যোগাযোগ সম্ভব নয়। গবাদিপশু নিয়েও অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই বন্যায় রূপ নেবে।
আকোটেরচর ইউনিয়নের কৃষক কাজল হোসেন বলেন, চরাঞ্চলে চাষাবাদ হওয়া মরিচ, সবজি, কলাবাগান, আউশ ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকেরা। বর্তমানে গোখাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
চরনাছিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রোকন উদ্দীন মোল্যা বলেন, হঠাৎ নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ বসতবাড়িতে পানি না উঠলেও তলিয়ে গেছে মাঠের আবাদি ফসল। এছাড়া যোগাযোগের জন্য নতুন যেসব মাটির রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন সরদার বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩৮টি গ্রাম রয়েছে। নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম এখন পানিতে প্লাবিত। দুয়েক দিনের মধ্যে সব ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হবে। চরের বসতঘরগুলো উঁচু করার কারণে ঘরে পানি প্রবেশ করতে না পারলেও উঠানে পানি রয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে এখন চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
সদরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি প্রবেশ করলে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা পানী বৃদ্ধির বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নদীপাড়ের মানুষের জন্য নিরাপত্তার কথা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে জরুরি পরিষেবা গ্রহণ করা হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বেড়ে বিপদসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মা নদীর পানিও। ইতিমধ্যে আকোটেরচর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ে অবস্থিত শয়তানখালী ট্রলার ঘাটের পাকা রাস্তা নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।