নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ): ছাতকের লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে নানা পরিবেশ ও কৃষি ক্ষতি সংক্রান্ত অভিযোগ তীব্র হচ্ছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ফসলি জমির ধ্বংস এবং নদীশাসনের অবহেলার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি আশপাশের বসতবাড়িতে ফাটল পড়ছে, গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
কৃষি জমি সংরক্ষণ ও ভূমি ব্যবহার আইন (২০২৪) অনুযায়ী আবাদি জমি থেকে টপ সয়েল কেটে ভরাট বা অন্য কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে প্রায় ৮০০ একর ফসলি জমি হাওরে পরিণত হয়েছে। এসব জমিতে ধান চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিবিদরা বলছেন, টপ সয়েল কাটা হলে মাটির উর্বরতা কমে যায়, ফলে কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
লাফার্জ সিমেন্ট কারখানার স্থাপনার পর থেকে ১৯ বছর ধরে স্থানীয়রা পরিবেশ দূষণ ও ফসলি জমি ক্ষতি নিয়ে নানা অভিযোগ করেন। মাটি সংগ্রহের জন্য একাধিক ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জলাশয়ে রূপান্তরিত হচ্ছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের অবহেলায় ক্ষুব্ধ।
কারখানার প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর সংগ্রহের জন্য ভারতের মেঘালয়ের পূর্ব খাসিয়া অঞ্চলের খনি থেকে চুনাপাথর আনা হয়। ২০০৭ ও ২০১০ সালে ভারতের উচ্চ আদালত খনি থেকে চুনাপাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো, তবে পরবর্তীতে পরিবেশ অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে উত্তোলন শুরু হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি কাটার সময় ব্যবহৃত খননযন্ত্র ও মাটি পরিবহনের ফলে সড়ক, জমি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারখানার উড়ন্ত ডাস্ট ও শব্দ দূষণ এলাকায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। ২০১১ সালে কারখানার মাটি জমা সংক্রান্ত অতিরিক্ত চাপের কারণে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিলো।
পরিবেশ বিপর্যয় ও ফসলি জমি ধ্বংসের প্রতিবাদে স্থানীয়রা একাধিকবার আন্দোলন করেছে, তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সমাধান দিতে পারেনি।
২০১৮ সালে পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত একটি রিট মামলা হাইকোর্টে দায়ের করা হয়। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনও কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয়রা পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন যাতে ফসলি জমি ও পরিবেশ রক্ষা করা যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়।