এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট :দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্যসুন্দরবনের উপকূলে বর্ষা এলেই প্রাণ ফিরে পায় বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজার। বিশেষ করে কাঠের তৈরি নৌকার হাটে জমে ওঠে বিপুল ক্রেতার সমাগম। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও রবিবার জমে ওঠে এ হাট, যেখানে স্থানীয় কারিগররা তাদের দক্ষ হাতে নির্মিত নানা রকমের নৌকা সাজিয়ে বসেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাধাল বাজারের পাশে গোপালপুর সড়কের ধারে সারি সারি নতুন নৌকা রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। পাকা কারিগরদের নিপুণ কাজে তৈরি এসব কাঠের নৌকা স্থানীয় গ্রামীণ জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে বহু বছর ধরে।
স্থানীয় কারিগর আলতাফ শেখ জানান, “আমি প্রতিদিন একটি করে নৌকা তৈরি করি। অর্ডার বেশি থাকলে সহকারী নিয়ে কাজ করি। খরচ হয় ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা, বিক্রি করি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়।” তিনি বলেন, “নৌকার গায়ে মোবাইল নম্বর লিখে রাখি, অনেকে ছবি তুলে নিয়ে যান, পরে ফোনে অর্ডার দেন।”
তিনি আরও জানান, বর্ষাকালে চাহিদা বেড়ে যায় অনেকটা। মাসে গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি নৌকা বিক্রি করেন তিনি। অন্যদিকে টেংরাখালীর আরেক নৌকা নির্মাতা মাকফুর শেখ বলেন, “এই পেশা দিয়েই এখন আমরা স্বাবলম্বী। শহরে আর কাজ খুঁজতে যাই না, বাড়িতেই রোজগার হচ্ছে।”
মোরেলগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা আব্দুল লতিফ জানান, “আমি এমন একটি নৌকা খুঁজছি যা দিয়ে বৃষ্টির সময় মাছ ধরা ও চলাচল দুইই করা যায়। কাঠের তৈরি এই নৌকাগুলো পানিতে ভারসাম্য ভালো রাখে এবং টেকসই হয়। তাই আমি নিজে এসে পছন্দ করে অর্ডার দিয়েছি।”
প্রতিটি নৌকাই যেন শুধু একটি বাহন নয়, একটি পরিবারের জীবিকার প্রতীক। কেউ তা দিয়ে মাছ ধরেন, কেউ মালামাল পরিবহন করেন আবার কেউ জলমগ্ন পথে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন। বাধাল বাজারের এই নৌকার হাট তাই বর্ষা এলেই হয়ে ওঠে এক টুকরো গ্রামীণ উৎসবের মতো।