শিরোনাম
◈ স্যার পাঁচ বছর, স্যার পাঁচ বছর’ ◈ ট্রাম্পের সঙ্গে বাবার বিরোধ নিয়ে যা বললেন ইলন মাস্ক-কন্যা ◈ ঢাকায় কোরবানির মাংসের অস্থায়ী বাজার: ২০০-৭৫০ টাকায় মিলে ১ কেজি গরুর মাংস ◈ বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বাজারে ভারতের গার্মেন্টস আগ্রাসন! ◈ ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ: টিপস, তাপমাত্রা ও সতর্কতা ◈ রাজধানীতে কোরবানির সময় গরুর লাথি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত শতাধিক ◈ শহরের ঈদ আনন্দে বর্জ্যের গন্ধ থাকবে না — স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ◈ কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করাই এবার বড় চ্যালেঞ্জ ◈ এপ্রিল মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযোগী নয়: মির্জা ফখরুল (ভিডিও) ◈ কোরবানির মৌসুমে ঢাকামুখী দুই হাজার দিনাজপুরের কসাই, জনপ্রতি লক্ষাধিক টাকার আয় লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত : ০৭ জুন, ২০২৫, ১২:৪৫ রাত
আপডেট : ০৭ জুন, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অস্ত্র-গুলি ও তিন সহযোগীসহ কুষ্টিয়ার ডন খ্যাত লিপটন গ্রেপ্তার

ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত যৌথ অভিযানে কুষ্টিয়ার ডন খ্যাত লিপটনসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আজ ৬ জুন (শুক্রবার) ভোরে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার উজানপুর ইউনিয়নের দুর্বাচারা গ্রামের কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ফেলে সেনা বাহিনীর একটি দল। সেখানে অভিযান চালিয়ে তিন সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৬টি পিস্তল, একটি বন্দুক কয়েকটি ম‍্যাগজিন, গুলি ও দেশীয় বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এক সময় চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তি ফৌজের নামে অস্ত্রবাজ গ্রুপ গড়ে কুষ্টিয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটন। আওয়ামী লীগে মুলধারার রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে এলাকায় হয়ে উঠেছিলেন   আতঙ্কের মুর্তিমান ।

এর আগে ৯০ এর দশকে কলেজ ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ের মাধ‍্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি লিপটনের। পরবর্তীতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অতিমাত্রায় সক্রিয় চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তিফৌজে নাম লেখান। কুষ্টিয়া শহরে প্রকাশ্যে জামাই বাবুসহ একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে আলোচনায় আসেন লিপটন। এর পর তাঁর অপরাধ নেটওয়ার্ক আশপাশের জেলায় বিস্তৃত হয়।

জানা গেছে, বহুল বিতর্কিত সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ‘ক্রসফায়ার’ এর নামে ভাড়ায় মানুষ খুন, গুম ও অস্ত্র কারবারের বিশাল নেটওয়ার্কও ছিল তার। ছাত্র-জনতার গণঅভ‍্যুত্থানে পতনের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে ভোল পাল্টে বিএনপির জার্সি গায়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন লিপটন। 

এদিকে গ্রেপ্তারের খবরে লিপটনের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকার মানুষ। তার বিরুদ্ধে অনেকেই এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। ভবানীপুর গ্রামের ধান ব্যবসায়ী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকার একটি মারামারি নিয়ে মামলায় সাক্ষী হওয়ার জেরে লিপটন র‍্যাব দিয়ে আমাকে একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়। দুটি অস্ত্র দিয়ে চালান করা হয়। চার মাস পর জামিন পেয়েছিলাম। এখনও হাজিরা দিচ্ছি।’ শুধু এই ব্যবসায়ীকেই নয়, গত এক যুগে নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের অর্ধশতাধিক মানুষকে র‍্যাব দিয়ে ফাঁসিয়েছেন লিপটন।

র‍্যাবের একটি সুত্র জানায়, র‍্যাবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান জিয়াউল আহসানের (বর্তমানে কারাবন্দি) সোর্স হিসাবেও কাজ করতেন লিপটন। জিয়ার নির্দেশে এক সময় লিপটন ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া গেলে তার নিরাপত্তা দিতেন স্থানীয় র‍্যাব সদস‍্যরা। গ্রামের বাড়ি গেলেও সেখানে র‍্যাবের পাহারা থাকত। লিপটন বিগত সময়ে র‍্যাবের নাম ব্যবহার করে অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নিরীহ লোকজনকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার মতো বহু ঘটনা ঘটালেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ করা না সত্ত্বে স্থানীয়রা জানান, নিজ এলাকার নিরীহ এক ইউপি মেম্বারকে র‍্যাবের মাধ্যমে তুলে এনে অস্ত্র রাখার অভিযোগ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর হাজার হাজার নারী-পুরুষ তাঁর বিরুদ্ধে মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল-সমাবেশ করেছিল। এ ছাড়া ২০১৫ সালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে গাজীপুরের একটি রিসোর্ট থেকে র‍্যাব তুলে নিয়ে যায়। এর পর তাঁর আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

এ ঘটনার জন্য সবুজের পরিবার হানিফকে দায়ী করে মামলা করেছে। অভিযোগ আছে, র‍্যাবকে দিয়ে সবুজকে অপহরণের পেছনে কলকাঠি নাড়েন লিপটন। ভয়ে লিপটনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি পরিবার। 

আরও জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ চরমপন্থি লিপটন র‍্যাবের সোর্স পরিচয় দিয়ে কুষ্টিয়া ও আশপাশের জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাঁর নিজ এলাকা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দূর্বাচারার লোকজনও অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি। আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে র‍্যাব দিয়ে নানাভাবে হয়রানি, অত্যাচার করা হয়েছে। জিয়াউল আহসানের শেল্টারে থাকাকালিন র‍্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে র‍্যাবকে দিয়ে অনেককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সেনাবাহিনীর কুষ্টিয়া ক্যাম্পের মেজর মোস্তফা জামান জানান, শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সেনাবাহিনীর কুষ্টিয়া ক্যাম্পের একটি দল সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দূর্বচারা গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর কবির লিপটনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ছয়টি পিস্তল, একটি লং ব্যারেলগান, বিপুল পরিমাণ গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এরপর লিপটন ও তার তিন সহযোগী রাকিব (৩৮), সনেট হাসান (৪৫) ও লিটনকে (২৬) আটক করে ক্যাম্পে আনা হয়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

সেনাবাহিনী বলছে, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা পেশিশক্তি প্রদর্শন মারামারি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি হাসান বলেন, একসময় পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন লিপটন। তাঁর বিরুদ্ধে ইবি থানায় বেশি কিছু জিডি রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়