শিরোনাম
◈ আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পুলিশের ১৯ পরামর্শ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাংলাদেশি অ্যাসাইলাম প্রত্যাশীদের জন্য দুসংবাদ ◈ মেজর সিনহাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে : অ্যাটর্নি জেনারেল (ভিডিও) ◈ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে দ্বিগুণ গতি, সুদ ও আসল উভয়ই বেড়েছে ◈ বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা তুলনাহীন: সেনাপ্রধান ◈ সন্দেহজনক লেনদেনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নাম? যা বললেন বিএফআইইউ প্রধান (ভিডিও) ◈ ২০২৪ সালে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর রেকর্ড ◈ ছয় জেলায় বন্যার শঙ্কা, নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা ◈ মেয়রের পদ বুঝিয়ে না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইশরাকের (ভিডিও) ◈ পদত্যাগ নিয়ে মুখ খুললেন ড. ইউনূস, বিদেশে পাচার ২৩৪ বিলিয়ন ডলার উদ্ধারের পরিকল্পনার কথা জানালেন

প্রকাশিত : ২৮ মে, ২০২৫, ১১:২২ দুপুর
আপডেট : ২৯ মে, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোরবানির আগে মিয়ানমার থেকে চোরাই গরুর স্রোত: নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সক্রিয় চোরাকারবারি চক্র, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য ও স্থানীয় খামার

একসময় দেশে কোরবানির ঈদে পশুর চোরাচালান ছিল সাধারণ চিত্র। গত কয়েক বছর ধরে সীমান্ত দিয়ে দেশে পশু চোরাচালানের হার অনেকটাই কমেছে। যদিও বৈধ আমদানির পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশুর চোরাচালান অব্যাহত ছিল। এ বছর মিয়ানমারের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় টেকনাফ দিয়ে পশু চোরাচালান হচ্ছে না। তবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাই গরু-মহিষের প্রবেশ বেড়েছে। এসব পশু বাংলাদেশে আসার পর স্থানীয়দের চোরাইকৃত পশুর মালিক সাজানো হয়। এরপর সেগুলো বাজারে বিক্রি করে চোরাকারবারি চক্র। সূত্র: বণিক বার্তা

নিয়ম অনুযায়ী, স্থল বা নদীপথে দেশে গবাদিপশু আমদানি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে রফতানিকারক দেশের অনুমতি নেয়াও বাধ্যতামূলক। এছাড়া আমদানি করা পশুকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হয় অন্তত তিন-সাতদিন। এজন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির নিজস্ব ও মানসম্মত কোয়ারেন্টাইন স্টেশন থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু চোরাই পথে আসা পশুর ক্ষেত্রে এসবের বালাই নেই। এতে স্থানীয় পশু পালনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দেশীয় পশু ও মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে।

সম্প্রতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় চোরাই পশুর চালান আসছে সবচেয়ে বেশি। মূলত মিয়ানমার ও ভারতের অংশ থেকে বিভিন্ন সাইজের গরু ও মহিষ সীমান্তপথ দিয়ে অবৈধভাবে ঢুকছে। বাংলাদেশে আসার পরই এসব পশুকে বিভিন্ন অস্থায়ী খামারে রেখে দেশীয় গরু হিসেবে সাজানো হয়। এরপর স্থানীয়দের মালিক দেখিয়ে রামু উপজেলার একাধিক হাটে তোলা হয় এসব পশু। আবার কক্সবাজারের স্থানীয় জাতের গরু ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় এসব গরু-মহিষ।

স্থানীয় একাধিক গরু খামারি ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পশু চোরাচালান রুটগুলোর মধ্য রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ফুলতলী পয়েন্ট থেকে পাহাড়ি পথে বামহাতির

ছড়া-দোছড়ি-মাঝির কাটা হয়ে জোয়ারিয়ানালা সড়ক। সেখান থেকে সড়কপথে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। এছাড়া ফুলতলী-ভালুকখাইয়া সড়ক হয়ে পাহাড়ি পথ ব্যবহার করে চেলিরতাল-বালুরতাল-রোহিঙ্গা টিলা-বক্কর টিলা-কালা চাঁদের পথ (কালা চাঁদের বাড়ির সামনের পথ) দিয়েও বিপুল পরিমাণ মিয়ানমার ও ভারতের গরু-মহিষ আনা হয়। অন্যদিকে ভালুকখাইয়া হয়ে পাহাড়ি পথে তুলাতলী-কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাজীপাড়া হয়ে গর্জনিয়া বাজার পর্যন্ত হাঁটিয়ে গরু-মহিষ আনা হয়।

রামু উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা রিজন বড়ুয়া বলেন, ‘নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাই গরু-মহিষ দেশে প্রবেশ করছে। বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল তৎপরতার মধ্যেও রাতের অন্ধকারে এসব পশু রামু উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালান হচ্ছে। এরপর বিভিন্ন খামার কিংবা বাড়িতে রেখে পশুর বাজারে তোলা হয়। মিয়ানমার থেকে আসা গরুর গায়ে বিশেষ ধরনের চিহ্ন থাকলেও খামারে রেখে তা মুছে ফেলা হয়। আবার কম দাম হওয়ায় বেশি মুনাফার লোভে ব্যাপারীরা ঝুঁকি নিয়েই এসব পশু কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গরু-মহিষ চোরাচালানের জড়িত। রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করছেন নাইক্ষ্যংছড়ির একাধিক পয়েন্ট। দেশের ভূখণ্ডে আনার পর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা অতিক্রম করে গরু-মহিষের মজুদ রাখা হয় কক্সবাজারের কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের হাজীপাড়াসহ আশপাশের অন্যান্য এলাকায়। পাড়ায় পৌঁছার পর পশুগুলোর মালিক হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখানো হয়। পরে গরু-মহিষগুলো বিক্রি করা হয় ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের গর্জনিয়া এলাকায়। সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দুদিন বসে এ হাট। কিছুদিন আগেও এ হাটে মিয়ানমার থেকে আনা শত শত চোরাই গরু-মহিষ বিক্রি হয়েছে। তবে সম্প্রতি ইজারাজনিত আইনি জটিলতায় বাজারটি বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এর পর থেকে কচ্ছপিয়া হাটে এসব চোরাই পশু বিক্রি হচ্ছে। মূলত হাটে আসার পর ইজারাদার থেকে টোকেন নিলেই দেশীয় কিংবা চোরাই পশু বৈধ বলে গণ্য হয়। টোকেন পাওয়ার পর চোরাই পশুগুলো চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

স্থানীয়রা জানান, গর্জনিয়া বাজারের ইজারা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর গরু-মহিষ আনতে নতুন দুটি রুট ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। এর মধ্যে একটি নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলা থেকে বামহাতির ছড়া। অন্যটি নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি হতে মাঝির কাটা হয়ে বড়বিল দিয়ে ঈদগাহ সদর রুট। অভিযোগ রয়েছে, এসব পশু বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছার পর থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত পুরো বিষয়টি পরিচালনা করছেন শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন নামে এক প্রভাবশালী। এ চক্রে রামু উপজেলার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ আরো ৮-১০ জন রয়েছে। এছাড়া মহেশখালী, চকরিয়া, উখিয়া উপজেলার এসব চক্রের তিন শতাধিক সদস্য রয়েছে বলে জানা যায়।

তবে সীমান্তপথে মিয়ানমার বা অন্য কোনো দেশ থেকে গরু চোরাকারবারের বিষয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালানের বিষয়ে বিজিবি সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে। তাছাড়া উপজেলার নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা সভায় চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা ও নির্দেশনা দেয়া হয়। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চোরাই পথে গরু দেশে প্রবেশের অভিযোগ পেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্যোগ নেবে।’

নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার রেজাউল করিম বলেন, ‘সীমান্তকেন্দ্রিক অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য প্রতিরোধে বিজিবি তৎপর রয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টহল, চোরাচালান প্রতিরোধী কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। বিজিবির তৎপরতায় নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে ঈদ উপলক্ষে অবৈধভাবে পশু দেশে নিয়ে আসার বেশকিছু অপরাধ আমরা প্রতিহত করেছি। এর পরও সীমান্ত এলাকার নানান গ্রুপ এ ধরনের বাণিজ্যে যুক্ত হওয়ায় শতভাগ হয়তো নির্মূল করা যাচ্ছে না।’ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কোরবানির ঈদের আগে পশুসহ বিভিন্ন পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে চোরাই পশু আসায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গরুর খোঁড়া রোগসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের দাবি, পাচার হয়ে আসা এসব পশু দেশীয় খামার ও স্থানীয়দের বাড়িতে কিছুদিন রাখা হয়। এ সময়ে চোরাই পশু থেকে স্থানীয় জাতের পশুর মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলহাস আহমেদ বলেন, ‘নিয়ম লঙ্ঘন করে আনা পশুর কারণে স্থানীয় জাতের পশুর মধ্যেও নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া মানুষ না জেনে চোরাই পথে আসা গরু-মহিষের মাংস খাওয়ার ফলে মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, কাশি, কফসহ নানা রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে।’ তবে বান্দরবানের সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে পশু আসার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়