জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : গত মার্চ-এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে আরও ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও জেলার ৩৮ হাজার ৫৭৫ জন নিবন্ধিত জেলে এখনও ভিজিএফের খাদ্য সহায়তা হিসেবে বরাদ্দকৃত চাল পাননি। এ নিয়ে জেলেদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতিজন জেলেকে দুই ধাপে ১৬০ কেজি করে চাল বিতরণের কথা। শনিবার (১৭ মে) বিকেল পর্যন্ত জেলার কোনো জেলে সরকারি বরাদ্দের (২য় কিস্তির) চাল পাননি জানা যায়।
এদিকে মেঘনায় জাল ফেললে উঠছে পাঙাসের পোনা, ছোট আকারের ট্যাংরা ও পোয়া। বড়গ কোনো ইলিশের দেখা না মিললেও মাঝে মধ্যে ইলিশের পোনাও ধরা পড়ছে। যদিও ইলিশের পোনা বা জাটকাগুলোকে জেলেরা ও ব্যবসায়ীরা চাপিলা মাছ বলে বিক্রি করছেন। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ইলিশ না পেয়ে হতাশায় পড়েছেন এখানকার জেলেরা।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় নিবন্ধিত ৩৮ হাজার ৫৭৫ জন জেলে রয়েছে। এরমধ্যে নিষেধাজ্ঞাকালীন খাদ্য সহায়তার চাল পাবেন ২৮ হাজার ৩৪৪ জন জেলে। তারা দুই ধাপে ৮০ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল বরাদ্দ পাবেন। এর মধ্যে মার্চে প্রথম ধাপের চাল বিতরণ করা হলেও দ্বিতীয় ধাপেরটি এখনো বরাদ্দ আসেনি। যদিও ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। তবে বেসরকারি হিসেবে লক্ষ্মীপুরে ৬০ হাজার জেলে রয়েছে।
সদরের চররমনী গ্রামের জেলে আব্দুল মান্নান, ইব্রাহিম হোসেন, বাদশা মিয়া, কমলনগরের ফলকন গ্রামের মো: সবুজ হোসেন, মো: নুরুল ইসলাম, মাতাব্বরহাট এলাকার মো: শরীফের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানায়, যারা নদীতে মাছ শিকার করেন, ওইসব জেলেরা অন্য কাজ জানে না বললেই চলে। মাছ ধরে জীবন-যাপন করে থাকেন তারা। নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারের দেওয়া চালে তাদের সংসার চলে না। ধারদেনা আর দাদনদারদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাদেরকে চলতে হয়। এবার নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় ঢালাওভাবে মাছ শিকার হয়েছে। প্রশাসনের নজরদারি প্রথম অবস্থায় ছিল না। শেষ মুহুর্তে এসে কিছু অভিযান দিয়েছে কমলনগরে। তবে রামগতি, সদর ও রায়পুরে অভিযানের খবর তেমন শোনা যায়নি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমেই হতাশায় পড়তে হয়েছে জেলেদের। মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। পাঙাসের পোনা, ট্যাংরা আর পোয়া মাছ বিক্রি করে খরচ উঠে না। ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে নদীতে জাল ফেললে ২-৩ হাজার টাকার মাছ ধরা পড়ে। কয়েকজন জেলেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে ডাঙায়। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে সবাইকে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবার জেলেরা মাছ শিকারে নিয়োজিত ছিল। ফলে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান এবার পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট ও লুধুয়া মাছঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে ইলিশের দেখা নেই। জেলেরা নদী থেকে নিয়ে আসছেন ছোট আকারের পোয়া, পাঙাসের পোনা, ইলিশের পোনা (চাপিলা)। এতে ঘাটে বেচাবিক্রির হাকডাক নেই। দীর্ঘ বিরতির পর ঘাটে উৎসব থাকলেও পুরোটাই ছিল নিরব।
অন্যদিকে অভয়াশ্রমে জাটকা সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞার দুই মাসে ২৭৬টি অভিযান পরিচালনা করেছে মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে ৩২ টি মামলায় ৯৪ জন জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানগুলোতে ২০ লাখ মিটার জাল, ৬৪ টি মাছ শিকারী নৌকা ও দেড় টন মাছ জব্দ করা হয়। মাছগুলো এতিমখানাসহ অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়। এছাড়া জালগুলো পুড়িয়ে বিনষ্ট করেছে প্রশাসন।
তবে অভিযান শতভাগ সফল দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, জাটকা ধরা পড়ে নদীর এমন এলাকায় মৎস্যবিভাগের নজরদারি ও অভিযান কঠোর ছিল। বিশাল নদীতে নজরদারির বিষয়ে লোকবলের স্বল্পতা রয়েছে। তবুও আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। নদীতে পানি বেশি, আবহাওয়াও খারাপ রয়েছে। খুব শিগগিরই জেলেদের জালে নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাবাদি তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দফায় ৮০ কেজি করে জেলেদেরকে চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার চাল এখনো জেলেদের হাতে দেওয়া হয়নি। । আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে জেলেদের হাতে চাল দিতে পারব বলে জানান এই কর্মকর্তা ।