অনিরুদ্ধ রেজা, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও জেলার উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে একের পর এক রবিশস্য গুলি পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে বন্যার কোনো আশংকা নেই বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় তিস্তা নদীর চর ও ডুবোচরের ক্ষেত সমুহ তলিয়ে গেছে। ৩ দিনের অব্যাহত বর্ষণে হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বড় লোকসানের মুখে পতিত হয়েছেন নদী তীরবর্তী কৃষকরা।
জেলার রাজারহাট উপজেলায় হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে চরাঞ্চলের ফসলী ক্ষেত। উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তার চর কিশোরপুরের বাদাম ক্ষেত গুলি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাদামের গাছগুলো পচে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দ্রুত পানি সরে না গেলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে পুরো বাদাম ক্ষেত সমুহ। এই দুঃশ্চিতায় আতংকিত বাদাম চাষীরা।
চলমান বর্ষনে জেলার আর এক দিকে রাজারহাট উপজেলায় বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় ফসল হারানোর ভয়ে কৃষকরা তাদের অপরিপক্ক বাদাম,মরিচ অন্যান্য ফসল পানি থেকে তুলে আনছেন।
চরবাসীরা জানান,ভারতের গজলডোবার পাহাড়ি ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরে চিনাবাদাম ১৭৫ হেক্টর, পাট ২০ হেক্টর, মরিচ ৩ হেক্টর, শাক-সবজি ৫ হেক্টরসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে এ সকল রবিশস্য পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৫ হেক্টর। তবে তা বেড়েছে। চরে জেগে ওঠা বালুমাটিতে বাদাম চাষ উপযোগী। এ অঞ্চলের কৃষকরা বাদাম চাষে লাভবান হওয়ায় চরে প্রতিবছর বাদাম চাষ করে থাকেন।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়নের কৃষক মমিনুল ইসলাম জানান, তিস্তার পানি বেড়ে অনেক কৃষকের চরে উৎপাদিত বাদাম ও মরিচ ক্ষেত গুলি তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না কমলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, যেহেতু বাদামগুলো পরিপক্ক হয়ে উঠেছে তাই বাদাম চাষিদের পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে বাদাম উত্তোলনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। সরকার প্রণোদনা দিলে তা তাদের হাতে পৌঁছে যাবে।