শিরোনাম
◈ নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি, জামায়াত আর এনসিপি ◈ হাতিয়ায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি, সারাদেশের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ ◈ উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা: বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪০, পাঁচ জনের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’ ◈ বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হা‌রের কার‌ণে ও‌য়েস্ট ই‌ন্ডি‌জের বিরু‌দ্ধে তারকা পেসারদের দলে ফেরালো পাকিস্তান ◈  শেরপুর সীমান্ত পথে ২১ রোহিঙ্গাকে পুশইন করল বিএসএফ! ◈ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দূর্ঘটনায় দগ্ধ  শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গার মেয়ে মাহিয়া ◈ ‎বর্ষা মৌসুমেও পাট পচাঁনোর মতো নেই পর্যাপ্ত পানি, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা ◈ বাংলাদেশ সুযোগ দেয়ায় শেষ ম‌্যা‌চে পাকিস্তান জি‌তে‌ছে, কামরান আকম‌লের বিস্ফোরক মন্তব্য  ◈ প্রাচীন হিন্দু মন্দির নিয়ে বৌদ্ধ-অধ্যুষিত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘাতের নেপথ্যে ◈ মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: হার মানলো অগ্নিদগ্ধ ১৩ বছরের শিক্ষার্থী মাকিন, নিহত বেড়ে ৩৩

প্রকাশিত : ২৪ জুলাই, ২০২৫, ১০:২৬ দুপুর
আপডেট : ২৫ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

প্রশিক্ষণ বিমান বারবার কেন বিধ্বস্ত হচ্ছে

মহসিন কবির: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহতরে ঘটনায় পুরোদেশ হশোকে মুহ্যমান। তবে প্রশিক্ষণকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিমান দুর্ঘটনা নতুন নয়। 

জানা গেছে, দেশের বিমানবাহিনীতে যে ধরনের যুদ্ধবিমান রয়েছে, এসব বিমান সারাবিশ্বেই আকাশ প্রতিরক্ষা, বহুমুখী অভিযান ও পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এ ধরনের বিমানের দুর্ঘটনার হার কিছুটা বেশি। আর দুর্ঘটনা ঘটলেও তা জনবিরল এলাকায় ঘটে। সর্বশেষ উত্তরায় বিমানটি কেন দুর্ঘটনার শিকার হলো তা নিয়ে মানুষের ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। ইতোমধ্যে আইএসপিআর জানিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরনো প্রযুক্তির এয়ারক্রাফট দিয়েই চলছে বিমানবাহিনীর কার্যক্রম। যুক্ত হয়নি আধুনিক যুদ্ধবিমান। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে নতুন এয়ারক্রাফট কেনার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

গত সোমবার দুর্ঘটনায় পড়া বিমানটি চীনের তৈরি এফটি-৭ বিজিআই মডেলের। দেশে গত এক দশকে সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এর কোনোটিতে পাইলট আহত বা নিহত হয়েছেন। কোনোটি বিধ্বস্ত হয়েছে জনবসতি থেকে দূরে। তবে এবারের মতো প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার নজির

সাম্প্রতিক ইতিহাসে নেই। অন্যান্য অনেক দেশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হয় অনেকটা জনমানবহীন খোলা জায়গায়। এই বিমানটির গঠন কেমন, কেন এটি এভাবে বিধ্বস্ত হলো, এতে কী ধরনের জ্বালানি ছিল এবং তা কতটা মারাত্মক- এ রকম নানা প্রশ্ন উঠে আসছে বারবার। আরও বলা হচ্ছে- জনবসতি এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ চালানো শুধু নিরাপত্তার ঝুঁকি নয়, এটি আন্তর্জাতিক নিয়ম, মানবিক দায়বদ্ধতা ও পরিবেশগত বিবেচনারও বড় ব্যত্যয়। যুদ্ধবিমান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছোটে। যে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা বৈমানিকের ভুলে জনবসতিতে বিধ্বস্ত হলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রশিক্ষণ বিমানেও ব্ল্যাক বক্স থাকে, সেটা অনুসন্ধান করে এগুলোর যথাযথ তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত দুই কারণে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। কারিগরি ত্রুটি ও মানবিক ভুল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিমানবাহিনীর বহর নতুন এয়ার ক্রাফট সংযোজন জরুরি। ক্রমাগত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি, নিজস্ব চাহিদা, পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া, আর্থিক সক্ষমতা, স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতা ইত্যাদি অনেক কিছু বিবেচনায় আনতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ভৌগোলিক ও কূটনীতিক বিষয়াদি।

দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে তিনবারই ছিল এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান। উত্তরায় বিধ্বস্ত হওয়া এফ-৭ সিরিজের বিমানটিও ছিল চীনের তৈরি জে-৭ তথা এফটি-৭ বিজিআই। এটি মূলত ১৯৬০-৯০ সময়কালের প্রযুক্তি। বর্তমানে এ ধরনের বিমানের দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেছে অ্যারোস্পেস গ্লোবাল নিউজ (এজিএন)। ১৯৬০ থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির বহরে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ও দ্রুতগামী জেট ছিল জে-৭। অ্যারোস্পেস গ্লোবাল নিউজের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানির সময় চীনা কোম্পানিটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে। সে সময় এর নামের সঙ্গে কিছু সংকেত ব্যবহার করা হয়। যেমন বাংলাদেশ যদি এ সিরিজের যুদ্ধবিমান আমদানি করে তা হলে এফ-৭-এর পর ইংরেজি অক্ষর ‘বি’ যুক্ত হয়। আর গ্লাস ককপিটের নকশার ক্ষেত্রে ‘জি’ এবং উন্নত সংস্করণ বোঝাতে ইমপ্রুফডের ‘আই’ যুক্ত হয়।

এজিএন বলছে, এ ধরনের জেট সারাবিশ্বেই আকাশ প্রতিরক্ষা, বহুমুখী অভিযান ও পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়। তবে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের চেয়ে এর দুর্ঘটনার হার বেশি। এর কারণ পুরনো নকশার এয়ারফ্রেম, সীমিত নিরাপত্তা, আধুনিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব। এভিয়েশনভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ কম স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান।

চীন মূলত নিজেদের বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য জে-৭ তৈরি করে। বহু পরে এসে এর বিভিন্ন সংস্করণ বিশ্বের নানা দেশের কাছে বিক্রি করে। দ্য ইকোনমিক টাইমসের তথ্যানুসারে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে বিমানগুলো হস্তান্তর করা হয়। এর পরপরই জে-৭/এফ-৭ সিরিজের বিমান উৎপাদন বন্ধ করে দেয় চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন। ২০২৩ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জে-৭ বিমানগুলোকে অবসরে পাঠিয়েছে। এই সিরিজের বিমানগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে বা ক্র্যাশ করেছে। বিশেষ করে পাকিস্তান, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া ও ইরানে জে-৭ বা এফ-৭ সিরিজের বহু বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস আছে।

রয়টার্সের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, ইরানের চেংদু এফ-৭ বিমানটি ইস্পাহানের আনারাক প্রদেশে বিধ্বস্ত হয়েছে ২০২২ সালের ৩ জুন। এ ঘটনায় দুই পাইলট নিহত হন। চীনের হিউবেই প্রদেশে চেংদু জে-৭ বিমান বিধ্বস্তের একটি ঘটনা ঘটে ২০২২ সালের ৯ জুন। এতে পাইলট সিট ইজেক্ট করে বেঁচে যান। এ রকম আরও বহু ঘটনার ইতিহাস খুঁজলেই পাওয়া যাবে। বাংলাদেশেই ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে এই সিরিজের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তিনবার। আর সর্বশেষে এই ঘটনা ঘটল গত ২১ জুলাই। বিমান যদি বিধ্বস্ত হয় বা জ্বালানি ট্যাংকে সামান্য ফাটলও দেখা দেয়, তখন জ্বালানি বেরিয়ে আসে। আর এই জ্বালানি বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায়।

আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির (আইকাও) অ্যানেক্স টু এবং অ্যানেক্স ইলেভেন অনুযায়ী, যে কোনো প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে জনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে কম উচ্চতায় উড়ালকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ন্যূনতম নিরাপদ ঊর্ধ্বতা (অলটিচিউড) বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে ঘনবসতি ও কূটনৈতিক এলাকাগুলোর ক্ষেত্রে।

যেসব দেশ জননিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়, সেসব দেশের ঘনবসতি এলাকায় সামরিক বা বেসামরিক কোনো বিমান প্রশিক্ষণ হয় না। জাপানে শহরের ওপর প্রশিক্ষণ নিষিদ্ধ, বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ হয় সমুদ্রের ওপর বা নির্জন এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্র জনবসতির ওপর কম উচ্চতায় প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্যারিস শহরের আকাশে কোনো প্রশিক্ষণ বিমান দেখা যায় না- শুধু বিশেষ অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট অনুমতিতে। ভারতের নয়াদিল্লিতে কম উচ্চতায় সামরিক বিমান নিষিদ্ধ। প্রশিক্ষণ হয় উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের বিশাল ঘরানার সামরিক ঘাঁটিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়