সালেহ্ বিপ্লব: অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে কিডনি রোগ বিস্তার লাভ করছে আশঙ্কাজনক হারে। দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যা। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। আর প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হচ্ছে।
রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯০০ জন রোগী নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন। এরপর থেকে প্রতিবছর ১ হাজার জন করে বাড়ছে। ডায়ালাইসিস নেওয়া রোগীর সংখ্যা মোট আক্রান্তের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বাকি রোগীরা, অর্থাৎ ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষের ডায়ালাইসিস করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। এর মানে হচ্ছে, তারা কষ্টভোগের পাশাপাাশি এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে।
বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ কিডনি রোগী, তাদের সবাইকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়ার সামর্থ্য দেশের হাসপাতালগুলোর নেই। সবাইকে ডায়ালাইসিস সুবিধা দিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরো ৫ গুণ বেশি বাজেট দরকার হবে।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে ৩৮টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সাতটি।
কিডনি নিয়ে কাজ করে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, কিডনি রোগীর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন। কিন্তু এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় শতকরা ১০ জন এই ব্যয় বহন করতে পারে। চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। সবার জন্য কিডনি সেবা নিশ্চিত করতে হলে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনকে বীমার আওতায় আনতে হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষ সচেতন হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে আসে। মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতেই আজ ৯ মার্চ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার এই দিবসটি পালিত হয়। চলতি বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘সবার জন্য সুস্থ কিডনি’।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিডনি দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন, ক্যাম্পস, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজি হাসাপাতালের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেশন হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এসবি/এসএ