শিরোনাম
◈ প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিউইয়র্ক পুলিশ প্রস্তুত ◈ এমপিদের পেনশন, গাড়ি কেনা নিয়ে ক্ষেপল এশিয়ার আরেক দেশের জেন-জি ◈ আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির ◈ ১৬ দিনে এলো ২০৪১০ কোটি টাকার প্রবাসী আয় ◈ কিছু মহল এখনো নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে: প্রধান উপদেষ্টা ◈ নির্বাচন পিআর এর মাধ্যমে হবে না, সেটা তো হবে সংবিধান সংশোধনের পরে: নজরুল ইসলাম  খান  ◈ এদেশের প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় অধিকারের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল : বিবৃতিতে তারেক রহমান ◈ ভোট দিতে পারবেন না শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা  ◈ নোয়াখালীতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কা, চালক নিহত ও আহত ১২ ◈ আনুপাতিক ভোটপদ্ধতি ‘ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করবে’: রিজভী

প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর, ২০২২, ০১:২৯ দুপুর
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০২২, ০৪:৪৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২৩ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ডেঙ্গু 

ডেঙ্গু 

শাহীন খন্দকার: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অনুকূল পরিবেশ পেয়েই বাড়ছে এডিস মশা। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরাও।

প্রধান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, এর প্রধান কারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। নিজ বাড়িতে এডিস মশা না থাকার সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও তা আমলে নিচ্ছেন না অনেকে। আবার জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকে গুরুত্ব দেন না। তিনি আরো বলেন, এসব কারণে রাজধানীসহ সারাদেশেই এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। 

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, রোগটি নভেম্বরে মাসেও চলমান থাকলেও ডিসেম্বরে নাও থাকতে পারে। কারণ শীতে মশার উৎপাত থাকে না। মশা পাখির মতো শীতে উড়তে পারে না। খুব বেশি উড়ার সক্ষমতা নেই মশার। শীতে পুরুষ মশারা মারা যায়। স্ত্রী মশার তুলনায় পুরুষ মশার জীবনকাল অনেক কম থাকে এবং তারা শরৎকাল শেষে বা সঙ্গম করার পরে মারা যায়। 

তিনি বলেন, স্ত্রী মশারা শীতকালে হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রায় চলে যায়। শরৎকালে স্ত্রী মশারা মাটি বা দেয়ালের ফাঁটলের ভেতর প্রবেশ করে এবং হাইবারনেট শুরু করে। তারা হিমশীতল বা পানিহীন পরিস্থিতিতে ছয় মাস পর্যন্ত হাইবারনেট করতে পারে। 

ডা. আবদুল্লাহ আরো বলেন, এবার ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। শীতে বৃষ্টিপাত কম হয়, বংশবিস্তার করতে পারে না এডিস মশা। সে ক্ষেত্রে শীতের তীব্রতা বাড়লে আশা করছি, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ জন্য আগামী এক সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে আসলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ স্থায়ী হতে শুরু করেছে। এ জন্য সারা বছরই এডিস মশা নিধন ও মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে কর্মসূচি রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন স্ত্রী মশা তাদের বিকাশ কয়েকমাসের জন্য ধীরগতির করে এবং যখন পর্যাপ্ত পানি বা উষ্ণতা পায়, তখন নিজেদের জীবন এগিয়ে নেওয়া শুরু করে। বসন্তকালে প্রকৃতি উষ্ণ হয়ে ওঠলে স্ত্রী মশারা হাইবারনেশন ভেঙে বেরিয়ে আসে এবং তাদের রক্ত পানের সময় শুরু হয়। এ সময়টায় স্ত্রী মশারা ডিম পাড়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। ফলে ডিমগুলো বিকাশে সহায়তার জন্য তাদের যথাসম্ভব রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়।

ডিমগুলো বিকাশের জন্য ডিমে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ করতে স্ত্রী মশাদের খাবার হিসেবে রক্তের সন্ধান করতে হয়। আর এসময়টায় মানুষজন হাফহাতা পোশাকে প্রকৃতির উষ্ণ আবহাওয়া উপভোগ করতে বাইরে বেশি বের হয়। আর এই সুযোগটি, স্ত্রী মশার কামড়ই মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়।

রাজধানীতে মশার প্রকোপের একটি বড় কারণ জিনগত পরিবর্তন। ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ঢাকায় শীতকালে কিউলেক্স মশার উৎপাত বেশি। ফলে বর্ষা মৌসুম এলই বাড়ে এডিস মশার প্রকোপ।

এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি।

৭ থেকে ১০ দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনো বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়। এবছর বাংলাদেশে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু।

চলতি বছর ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে চলতি বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে তা ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ডও করেছে। অক্টোবরে ডেঙ্গুতে ৮৬ জনের মৃত্যু হয়, যা ২৩ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। কিন্তু নভেম্বরের প্রথম ২০ দিনে ৮৯ জনের মৃত্যুতে সেই রেকর্ডও ভেঙে গেছে।

এ ছাড়া গত বছর ডেঙ্গুতে ২৮ হাজার ৪২৯ জন আক্রান্ত হলেও চলতি বছরের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছিল। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইকরামুল হক বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের অসচেতনতায় এখনও আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, তাতে শিগগিরই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

এ ব্যপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু একেবারে বিদায় নেবে না। আমার অনুমান ডিসেম্বরের শুরুতে কমে আসবে প্রকোপ। সেটি সম্ভব হবে শীতের কারণেই। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম

এসকে/এমআই/এইচএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়